Total Pageviews

Monday, July 8, 2019

The Duchess of Malfi - John Webster - Bangla Translation - Act - 2 - Scene 1-2

The Duchess of Malfi - John Webster - Bangla Translation - Act - 2 - Scene 1-2

First Part - Duchess of Malfi Bangla Translation

Previous Part - Bangla Translation

The Duchess of Malfi - John Webster - Bangla Translation - Act - 2 - Scene 1-2

দ্বিতীয় অঙ্ক - প্রথম দৃশ্য - স্থানঃ মালফি, ডাচেসের প্রাসাদের একটি কক্ষ
[বসোলাঃ ক্যাস্ট্রুসিওর প্রবেশ]
বসোলাঃ আপনি বলছেন আপনি একজন বিখ্যাত অমাত্য হিসাবে বিবেচিত হতে চান
ক্যাস্ট্রুসিওঃ সেটাই আমার জীবনের মূল লক্ষ্য
বসোলাঃ ব্যাপারটা আমাকে একটি খুঁটিয়ে দেখতে দিন চলনসই সুন্দর মুখশ্রী তো আপনার আছেই নাইট-ক্যাপের তলা থেকে আপনার লম্বা কান দুটোর অনেকটাই দৃশ্যমান কেমন করে কলারের ফিতাগুলো পাকাতে হয় তা আপনি শিখে নেবেন বলে আশা করি নির্ধারিত বক্তৃতা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিটি বাক্যের শেষে তিন-চার বার গুন গুন করবেন অথবা নাকে ব্যথা না হওয়া পর্যন্ত তা খুঁটবেন যাতে প্রতীয়মান হবে আপনি কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করছেন যখন আপনি ফৌজদারী আদালতে পৌরহিত্য করবেন তখন যে বন্দীকে ফাঁসি দিতে চান, তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসবেন; কিন্তু যদি আপনি তার দিকে ভ্রুকুটি করেন এবং তাকে ভয় দেখান তবে তার যেন ফাঁসি না হয় সেটা নিশ্চিত করবেন
ক্যাস্ট্রুসিওঃ বিচারক হিসাবে আমি খুবই হাসিখুশি থাকব
বসোলাঃ রাতে খাওয়া দাওয়া করবেন না এতে আপনি প্রশংসনীয় প্রজ্ঞার অধিকারী হতে পারবেন
ক্যাস্ট্রুসিওঃ বরং এ অভ্যাস আমার কলহের স্পৃহা বৃদ্ধি করবে কারণ লোকে বলে, যারা ঝগড়া-বিবাদ ও গোলমালের সৃষ্টি করে তারা কদাচিত মাংস খায় আর সে জন্যই তারা এত বিক্রমশালী কিন্তু জনতা আমাকে বিখ্যাত লোক হিসাবে গণ্য করছে কিনা তা আমি কিভাবে জানতে পারব?
বসোলাঃ সেটা জানার একটা কৌশল আমি আপনাকে শিখিয়ে দিব রটিয়ে দিন যে আপনি মৃত্যুশয্যায় শায়িত তখন যদি শোনেন জনসাধারণ আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছে নিশ্চিত হবেন যে আপনাকে তারা একজন হোমরা চোমরা বলেই গণ্য করেছে
[এক বৃদ্ধার প্রবেশ]
তুমি বুঝি মুখে রং মেখে এখানে এলে?
বৃদ্ধাঃ কি দেখে আপনি একথা বললেন?
বসোলাঃ কেন, তোমার মুখের ঐ ঘৃণ্য চেহারা দেখে রং না মাখা অবস্থায় তোমাকে দেখতে পাওয়া তো প্রায় অত্যাশ্চর্য ব্যাপার শেষবার যখন তোমায় দেখেছিলাম তোমার মুখে কুঁচকানো দাগ ও গর্ত ছিল ফ্রান্স নিবাসী এক ভদ্রমহিলার বসন্ত হয়েছিল বসন্তের দাগ দূর করার জন্য সে মুখের চামড়া উঠিয়ে ফেলেছিল আগে তাকে দেখাতে নাটমেগ পেষার যন্ত্রের মতো আর এখন তাকে অসময়ে জাত শজারুর মতো দেখায়
বৃদ্ধাঃ আপনার ভাষায় কি এরই নাম রং মাখা?
বসোলাঃ না, তা নয় তুমি বরং একে কোন আলসার আক্রান্ত মহিলার নিজ চেহারাকে পুনরায় চলনসই করার নিমিত্তে ঘষা-মাজার প্রচেষ্টা হিসাবে অভিহিত করতে পার তোমার প্রসাধন চর্চা সম্বন্ধে এই হল আমার সাদা-মাটা বর্ণনা
বৃদ্ধাঃ মনে হচ্ছে আমার প্রসাধন কক্ষটি আপনি ভাল করেই চেনেন?
বসোলাঃ ঐ কক্ষে সরীসৃপের চর্বি, সাপের ডিম, ইহুদিদের লালা, তাদের সন্তানদের মল-মূত্র ইত্যাদি দেখতে পেয়ে যে কেউ সন্দেহ করতে পারে যে সেটা ডাইনী বিদ্যা সংক্রান্ত জিনিস পত্রের দোকান আর এ সমস্তই তুমি মুখের পরিচর্যায় কাজে লাগাও তুমি যদি ধর্মীয় কারণে উপবাসরত থাক তবু তোমার মত মহিলাকে চুম্বন করার চেয়ে প্লেগরোগীর পায়ের তলায় পড়ে থাকা মরা কবুতরের মাংস ভক্ষণ করাটাও আমার কাছে অধিকতর পছন্দনীয় তোমরা দুজন যৌবনকালে যে সব নষ্টামি করেছ তা চিকিৎসকের আয়ের বড় উৎসে পরিণত হয়েছে ঐ টাকা দিয়ে সে প্রতি বসন্তেই তার ঘোড়ার লাগাম, জিন ইত্যাদি পাল্টায় এবং প্রতিবার পাতা ঝরার মৌসুমে শয্যাসঙ্গী (উচ্চ মূল্যে সংগৃহীত) বদলায় ভেবে অবাক হই কেন তোমরা নিজেদের ঘৃণা করো না এখন আমার দার্শনিক চিন্তাধারার কথা শোনঃ মানুষের দৃশ্যমান চেহারার মধ্যে এমন কিছু আছে কি যাতে তাকে ভালবাসা যায়? যদি প্রকৃতির খেয়ালে এমন কোন ঘোড়া, ভেড়া বা হরিণের জন্ম হয় যার সাথে মানুষের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাদৃশ্য রয়েছে তবে আমরা সেটাকে কুলক্ষণ মনে করি ঐ প্রাণীকে বিস্ময়কর বস্তু ভেবে আমরা তার থেকে দূরে থাকি আপন বিকৃতি মানুষকে অবাক করে না অথচ স্বীয় বিকৃতির প্রতিফলন অন্য প্রাণীর মধ্যে দেখলে সে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়ে কিন্তু আমাদের রক্তের মাঝেই এমন সব রোগ পরিবাহিত হচ্ছে যাদের প্রকৃত নাম আহরণ করা হয়েছে প্রাণীজগত থেকে আমরা সবসময়ই একটা পচনশীল ও মৃতপ্রায় দেহ বহন করে চলি এবং এ দেহ শেষ পর্যন্ত উকুন ও কীটপতঙ্গ দ্বারা ভক্ষিত হয় তা সত্ত্বেও আমরা সেটাকে মসৃণ কাপড়ে আবৃত রাখি তবুও আমরা ভয় পাই এই ভেবে যে কখন যেন চিকিৎসকরা আমাদের মৃত ঘোষণা করে আমাদের দেহ কবরে পাঠান এবং তা কীট পতঙ্গের সুমিষ্ট খাদ্যবস্তুতে পরিণত হয় আপনার স্ত্রী রোমে গিয়েছেন; আপনার দুজনে মিলিত হবার পর লুকায় গিয়ে ঝর্ণায় স্নান করবেন তাহলে আপনাদের দেহের ব্যথা সেরে যাবে আমার হাতে অন্য কাজ রয়েছে
[ক্যাস্ট্রুসিওঃ বৃদ্ধ মহিলার প্রস্থান]
আমি লক্ষ্য করেছি আমাদের ডাচেস আজকাল অসুস্থ থাকেন তিনি বমি করেন, তাঁর উদর স্ফীত হয়েছে তাঁর চোখের মণির কোণাগুলো নীলাভ হয়ে উঠেছে, তার গণ্ডদেশ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে, তার নিতম্বে মাংস জমছে উপরন্তু তিনি ঢিলে-ঢালা গাউন পরছেন যা ইতালীয় ফ্যাশনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এ সবকিছুর পিছনে একটা রহস্য আছে আমি একটা চমৎকার কৌশল প্রয়োগ করব যার দ্বারা হয়তো রহস্যটি উন্মোচিত হবে আমি কিছু এপ্রিকট কিনব; এবং এগুলোই এ মৌসুমের প্রথম ফল
[দূরে কথা বলতে বলতে অ্যান্টনিও ও ডেলিওর প্রবেশ]
ডেলিওঃ বল কি? তোমার বিয়ের পর এতগুলো দিন চলে গিয়েছে? তুমি তো আমায় অবাক করে দিলে
অ্যান্টনিওঃ এ ব্যাপারে আমি তোমার মুখ চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিতে চাই পরিস্থিতি এমন যে যদি আমার মনে হয় একমাত্র শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে তোমার নিকট থেকে এই কথাগুলো প্রকাশ পেতে পারে তাহলে আমি চাইব যে তুমি যেন আদৌ নিঃশ্বাস নিতে না পার (বসোলার প্রতি) এই যে জনাব, ভাবনায় মগ্ন হয়ে গিয়েছ না কি? তুমি কি জ্ঞানী হিসাবে খ্যাতি অর্জনের চেষ্টা করছ?
বসোলাঃ জনাব, জ্ঞানী হিসাবে খ্যাতি লাভ করাটা বাজে চর্মরোগের সাথে তুলনীয় যা মানুষের সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে যদি সরলতা আমাদের কোন কুপথে নিয়ে না যায়, তবে তা আমাদের সুখের নিশানা দেখায় সুন্দরতম জ্ঞানের থেকেই সূক্ষ্ণতম ভুলের উৎপত্তি হয় তাই আমাকে শুধুমাত্র সৎ থাকতে দিন
অ্যান্টনিওঃ আমি তোমার অন্তরের কথা বুঝতে পারছি
বসোলাঃ সত্যি কি তাই?
অ্যান্টনিওঃ কারণ তুমি কাউকে দেখাতে চাও না যে এই পদোন্নতিতে তুমি গর্ববোধ করেছ তুমি তোমার সেকেলে বিষন্ন ভাবটাই বজায় রেখেছ পরিত্যাগ কর, এহেন আচরণ পরিত্যাগ কর
বসোলাঃ আমি যে শব্দগুচ্ছ বা অভিধাই ব্যবহার করি না কেন আমাকে সৎ থাকার সুযোগ দিনআমি কি আপনার কাছে মনের কথাটা স্বীকার করব? যে পর্যায়ে পৌঁছানোর যোগ্যতা আমার আছে কখনই তার চেয়ে উচ্চপর্যায়ে আরোহণের আকাঙ্খা আমার নেই আমার মতো মানুষের স্বভাব এবং কার্যকলাপের সাথে উকিলের শ্লথ গতি সম্পন্ন খচ্চরই মানানসই দেখুন, যখন মানুষের মন তার অশ্বের চেয়েও দ্রুতগতিতে শূন্যে ধাবমান হয়, তখন তারা উভয়েই দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায়
অ্যান্টনিওঃ তুমি হয়তো স্বর্গপানে তাকাও কিন্তু, আমার ধারণা, বায়ুমণ্ডলে রাজত্বকারী শয়তান তোমার দৃষ্টিপথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়
বসোলাঃ আঃ জনাব, আপনি এখন উদীয়মান নক্ষত্র আপনি ডাচেসের প্রধান কর্মকর্তা, একজন ডিউক আপনার এক নম্বর জ্ঞাতি ভাই আপনি যদি বলেন, আপনি রাজা পেপিনের বংশধর অথবা রাজা পেপিন স্বয়ং তাতে বিশেষ কিছু এসে যায় না পৃথিবীর বড় বড় নদীর উৎসমুখ সন্ধান করলে দেখতে পাবেন সেখানে পানির কয়েকটি বুদ্বুদ ছাড়া কিছু নেই কেউ কেউ ভাবতে পারে নিম্নপদস্থ ব্যক্তিদের তুলনায় রাজ-রাজড়াদের আত্মা অধিকতর শক্তিশালী উৎস থেকে উদ্ভূত হয়েছে তাদের ধারণা ভুল উভয় প্রকার আত্মার স্রষ্টা একজনই একই ধরনের আবেগ অনুভূতিতে তারা আলোড়িত হয়, একজন ভিকার যেমন করে টিথ হিসাবে প্রতিবেশীর শূকরটি দাবী করে আইনের আশ্রয় নেয় এবং তার সর্বনাশ করে, তেমনি রাজ-রাজড়ারা কামান দাগিয়ে সুদৃশ্য নগরসমূহ এমনকি আস্ত প্রদেশ ধূলিসাৎ করে দেন
[প্রস্থান]
[ডাচেস এবং ভদ্রমহিলাগণের প্রবেশ]
ডাচেসঃ অ্যান্টনিও, তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি, তাই না? আমার বেশ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বসোলা, শোন তুমি কি আমার জন্য একটি পালকি যোগাড় করতে পারবে? ডাচেস অব ফ্লোরেন্স যেমন ধরনের পাল্কিতে চড়তেন ঠিক তেমনটি হওয়া চাই
বসোলাঃ ঐ ডাচেস তো গর্ভাবস্থায় পালকি ব্যবহার করতেন
ডাচেসঃ বোধ করি, তিনি তাই করেছিলেন (পরিচারিকার প্রতি) এই এদিকে এসো তো, আমার জামার কলার ঠিক করে দাও কি ব্যাপার, কতক্ষণে ঠিক করবে? না, তুমি বড় ধীরগতিসম্পন্ন মহিলা তোমার নিঃশ্বাসে লেমন-পিলের গন্ধ! তোমার কাজ কি শেষ হয়নি আমি কি তোমার আঙ্গুলের তলায়ই মূর্ছা যাব? মৃগীরোগে আমি বড়ই ভুগছি
বসোলাঃ (জনান্তিকে) আমার তো খুবই সন্দেহ হচ্ছে
ডাচেসঃ তোমাকে বলতে শুনেছিলাম যে ফরাসী অমাত্যরা রাজার সামনে টুপি পরে থাকে
অ্যান্টনিওঃ আমি স্বচক্ষে তা দেখেছি
ডাচেসঃ রাজার উপস্থিতিতেও তাদের মাথায় টুপি থাকে?
অ্যান্টনিওঃ হ্যা
ডাচেসঃ আমাদেরও কি ঐ প্রথাটি চালু করা উচিত নয়? ফেল্ট হ্যাট মাথা থেকে খোলার ব্যাপারটি যতটা না দায়িত্ব তার তুলনায় বেশী আনুষ্ঠানিকতা সবার আগে তুমি টুপি পরে নাও এবং দরবারের অন্যদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন কর
অ্যান্টনিওঃ আমার অক্ষমতার জন্য আমাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন ফ্রান্সের তুলনায় অপেক্ষাকৃত শীতপ্রধান দেশগুলোয় পর্যন্ত অভিজাত ব্যক্তিরা উন্মুক্তমস্তকেই রাজার সামনে দণ্ডায়মান থাকেন এটা আমি লক্ষ্য করেছি আমি মনে করি সম্মান প্রদর্শনের জন্যই এই প্রভেদটুকু থাকা দরকার
বসোলাঃ মাননীয়া ডাচেসের জন্য আমি একটা উপহার এনেছি?
ডাচেসঃ কি বললে জনাব? আমার জন্য!
বসোলাঃ মহোদয়া, আমি কিছু এপ্রিকট এনেছি
ডাচেসঃ খুব ভাল কথা। সেগুলো কোথায়? এ বছর কারো মুখে ঐ ফলের নাম শুনিনি।
বসোলাঃ জনান্তিকে ভাল, ভাল, তার মুখ রাঙ্গা হয়ে উঠছে।
ডাচেসঃ তোমাকে সত্য সত্যই ধন্যবাদ জানচ্ছি। এই ফল্পগুলো অদ্ভুত সুন্দর। আমাদের মালিটা বড়ই অদক্ষ। ফলে এই মাসে আমরা একটি ফলও পাইনি।
বসোলাঃ মহোদয়া, আপনি কি ফলগুলোর খোসা ছাড়াবেন না?
ডাচেসঃ নাহ, আমার ধারণা তাদের কস্তুরীর ন্যায় সুঘ্রাণ আছে। আমি বাস্তব কথাই বলছি
বসোলাঃ আমি তা জানতাম না। তথাপি, আমি চাই আপনি খোসাগুলো ছাড়িয়ে নিন।
ডাচেসঃ কেন?
বসোলাঃ ও বলতে ভুলে গিয়েছিলাম যে ঐ অসৎ মালিটা দ্রুত অধিক মুনাফা লুটার জন্য ফলগুলো ঘোড়ার মলের মাঝে রেখে পাকিয়েছে।
ডাচেসঃ ও, তুমি রসিকতা করছ - অ্যান্টনিও, দোহাই তোমার একটা ফল খেয়ে দেখ তো।
অ্যান্টনিওঃ মহোদয়া, আমি ঐ ফল আসলেই পছন্দ করি না।।
ডাচেসঃ বুঝেছি জনাব, তুমি ঐ সুস্বাদু ফল ভক্ষণ করা থেকে আমাদের বঞ্চিত রাখতে ইচ্ছুক নও। এপ্রিকট একটা চমৎকার ফল। লোকে বলে, এটা ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে।
বসোলাঃ এক বৃক্ষে অন্য বৃক্ষের ফল ফলানোর কৌশলটি চমৎকার।
ডাচেসঃ ঠিকই বলেছ। এ হল প্রাকৃতিক উপায়ে জাত বৃক্ষাদি উন্নয়নের একটা পন্থা।
বসোলাঃ এই পদ্ধতির সাহায্যে বুনো টক আপেলের গাছে পিপিন জাতীয় আপেল জন্মানো যায়। আবার ব্ল্যাকথনের ঝোপে ড্যামজন ফলানো যায়। (জনাস্তিকে) কি আকুল হয়ে উনি ফলগুলো খাচ্ছেন!
ডাচেসঃ ধন্যবাদ, বসোলা। যদি ফলগুলি খেয়ে আমি অসুস্থ হয়ে না পড়ি তাহলে বলা যাবে ফলগুলো সত্যি ভাল।
অ্যান্টনিওঃ ম্যাডাম, এখন কেমন বোধ করছেন?
অচেসঃ এই সবুজ ফলগুলো আমার পেটে গিয়ে মিত্র সুলভ আচরণ করছে না। উঃ আমি ভীষণ ঘামছি।
বসোলাঃ আমি খুবই দুঃখিত।
ডাচেসঃ আমার ঘরে বাতি নিয়ে এসো। ও প্রিয় অ্যান্টনিও, আমার ভয় লাগছে। আমি হয়তো শেষ হয়ে যাচ্ছি।
ডেলিওঃ ওখানে বাতি জ্বালাও, বাতি।
[মঞ্চের একধার দিয়ে ডাচেসঃ ভদ্রমহিলাদের এবং অপর ধারে দিয়ে বসোলার প্রস্থান ]
অ্যান্টনিওঃ ওহে বিশ্বাসী বন্ধু ডেলিও, আমরা ডুবেছি। আমার ভয় হচ্ছে বুঝি তার প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে। তাকে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার মতো সময় আমাদের হাতে আদৌ নেই।
ডেলিওঃ তুমি কি তার পরিচর্যার জন্য ঐ মহিলাদের তৈরী রেখেছ? অধিকন্তু ডাচেসের পরিকল্পনা মোতাবেক নিরাপদে এবং সুচতুরভাবে ধাত্রী আনার ব্যবস্থা করেছ?
আন্টনিওঃ হ্যা, তা করেছি।
ডেলিওঃ তবে এই অযাচিত উপলক্ষ্যটি কাজে লাগাও। ঘোষণা করে দাও যে বসোলা ঐ এপ্রিকটগুলোর মাধ্যমে ডাচেসকে বিষ প্রয়োগ করেছে। তাহলে তাঁকে নিজ ঘরে আবদ্ধ রাখার ব্যাপারে একটা অজুহাত পাওয়া যাবে।
আন্টলিওঃ ছি, ছি, তাহলে ডাক্তাররা তাকে দেখার জন্য ভীড় জমাবে।
ডেলিওঃ সেক্ষেত্রে তুমি এমন ভান করতে পার যেন ডাচেস নিজেই পূর্বে প্রস্তুত করা কোন বিষ প্রতিষেধক ঔষধ ব্যবহার করবেন। কারণ তার আশঙ্কা চিকিৎসকরা তাকে পুনরায় বিষ প্রয়োগ করতে পারে।
অ্যান্টনিওঃ আমি বিস্ময়ের ঘোরে সব ঘুলিয়ে ফেলছি। আমি ব্যাপারটা ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতেই পারছি না।
প্রস্থান
দ্বিতীয় অঙ্ক
দ্বিতীয় দৃশ্য
স্থানঃ ডাচেসের প্রাসাদের একটি হলঘর
বসোলার প্রবেশ
বসোলাঃ অতএব, এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নাই যে দ্রুত রেগে যাওয়ার প্রবণতা এবং গোগ্রাসে এপ্রিকট ভক্ষণ-উভয়টিই ডাচেসের গর্ভাবস্থার স্পষ্ট লক্ষণ।
এক বৃদ্ধ রমণীর প্রবেশ
আরে, তুমি এখন কোথায় চললে?
বৃদ্ধাঃ স্যার, আমার একটু তাড়া আছে।
বসোলাঃ শোন, এক যুবতী পরিচারিকার তীব্র আকাঙখা ছিল গ্লাস হাউস দেখবার।
বৃদ্ধাঃ না, ওকথা থাক, দয়া করে আমায় যেতে দিন?
বসোলাঃ তার একমাত্র কারণ সে জানতে চাইছিল ওটা কেমন অদ্ভুত ধরনের জিনিস।
বৃদ্ধাঃ আমি গ্লাস-হাউস সম্বন্ধে আর একটি কথাও শুনব না। আপনি অদ্যাবধি মহিলাদের অপমান করে চলেছেন।
বসোলাঃ কে, আমি? না, না। আমি কেবল মাঝে মাঝে কথাপ্রসঙ্গে তোমাদের দোষ-ত্রুটি গুলো উল্লেখ করি। কমলালেবু গাছে তো কাঁচা ও পাকা ফল এবং ফুল একই সাথে থাকে। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ভালবাসার স্বার্থে নয় বরং মূল্যবান পুরস্কারের লোভেই দেহ বিলিয়ে দাও। সজীব বসন্ত ঋতুর সুঘ্রাণ রয়েছে কিন্তু ক্ষীয়মান শরৎকালের স্বাদও কম নয়। বক্সের জুপিটারের যুগের মতো যদি একালে স্বর্ণবৃষ্টি হতো তাহলে এ যুগেও ডানার মতো মহিলাদের পাওয়া যেত যারা পুরুষদের বরণ করে নিতে বাহুপাশ বিস্তার করত। আচ্ছা তুমি কি কখনই গণিতশাস্ত্র অধ্যায়ন করনি।
বৃদ্ধাঃ গণিতশাস্ত্র! সেটা আবার কি, জনাব?
বসোলাঃ কেন, সেটা হল বহু রেখা কিভাবে একই বিন্দুতে মিলিত হয় তা জানার কৌশল। যাও, তোমার পোষ্যকন্যাদের সদুপদেশ দাও গে। তাদের বল যে শয়তান রমণীর কটিবন্ধে পুরানো মরিচাধরা ঘড়ির মতো ঝুলে থাকতে ভালবাসে; ফলে রমণীরা বুঝেই উঠতে পারে না কিভাবে সময় চলে যাচ্ছে।
[বৃদ্ধার প্রস্থান]
[অ্যান্টনিও, রডেরিগো ও গ্রিসোলানের প্রবেশ]
অ্যান্টনিওঃ রাজপ্রাসাদের সকল দ্বার বন্ধ করে দিন।
রডেরিগোঃ কেন, জনাব? কি বিপদ ঘটেছে?
অ্যান্টনিওঃ এখনি খিড়কির দরজাগুলো বন্ধ করুন এবং সকল রাজ কর্মচারীকে ডাকুন।
গ্রিসোলানঃ আমি এখনি তা করব।
[প্রস্থান]
অ্যান্টনিও উদ্যানের ফটকের চাবি কার কাছে থাকে?
রডেরিগোঃ ফলোবস্কোর নিকট।
অ্যান্টনিওঃ তাকেও অচিরেই চাবি আনার নির্দেশ দিন।
[ভূত্যদের নিয়ে গ্রিসোলানের পুনঃ প্রবেশ]
প্রথম ভৃত্যঃ হে রাজকর্মচারীবৃন্দ, এ যে জঘন্যতম বিশ্বাসঘাতকতা।
বসোলাঃ (জনান্তিকে) যদি ঐ এপ্রিকটগুলোয় এখন আমার অজান্তে কেউ বিষ মিশিয়ে দেয় তাহলে অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে।
প্রথম ভূত্যঃ কয়েক মুহূর্ত আগেই ডাচেসের কক্ষ থেকে একজন সুইস সৈনিককে আটক করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ভূত্যঃ সুইস সৈনিক। বল কি?
বসোলাঃ হাঃহাঃহাঃ
[সে হাসল]
প্রথম ভৃত্যঃ শয়তান কি অনিষ্ট করতে পারে তা দেখা উচিত।
অ্যান্টনিওঃ সকল কর্মকর্তাই কি হাজির হয়েছেন?
ভৃত্যগণঃ আমরা হাজির।
অ্যান্টনিওঃ ভদ্রমহোদয়গণ, আপনারা জানেন সোনা ও রুপার বহু জিনিসপত্র আমাদের এখানে থেকে হারিয়ে গিয়েছে। উপরন্তু আজ সন্ধ্যায় ডাচেসের আলমারি থেকে চার হাজার ডুকাট মূল্যের রত্ন হারিয়ে গিয়েছে। প্রবেশদ্বার গুলো বন্ধ করা হয়েছে তো?
ভূতগণঃ হ্যা।
অ্যান্টনিওঃ ডাচেস ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যেন প্রত্যেক কর্মকর্তাকে সূর্যোদয় পর্যন্ত নিজ নিজ কক্ষে তালাবদ্ধ রাখা হয় এবং তাদের সবগুলো সিন্দুকের চাবি এবং ঘরগুলোর বাইরের দরজার চাবিসমূহ তার শয়নকক্ষে প্রেরণ করা হয়। তিনি খুবই অসুস্থ।
রডোরিগোঃ তার ইচ্ছামতই কাজ হবে।
অ্যান্টনিওঃ তিনি আপনাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছেন যেন আপনারা মনঃক্ষুন্ন না হন। এই পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যারা নির্দোষী তাদের নির্দোষিতা সম্বন্ধে অধিকতর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বসোলাঃ এই যে বাগানে কর্মরত ভদ্রলোকের দল, তোমাদের সেই সুইস সৈনিক গেল কোথায়?
প্রথম ভৃত্যঃ আমার এই হাতের নামে শপথ করে বলছি ঐ তথ্যটি রন্ধন শালার এক ছোকরা বিশ্বাসযোগ্যভাবেই আমায় পরিবেশন করেছিল।
[অ্যান্টনিও ও ডেলিও ব্যতীত সকলের প্রস্থান]
ডেলিওঃ ডাচেস এখন কেমন আছেন?
অ্যান্টনিওঃ তিনি এখন ভীষণ যন্ত্রণা ও বেদনা বোধ করছেন এবং ভয়ও পাচ্ছেন।
ডেলিওঃ তাকে সব সময় প্রশান্তিদায়ক কথাবার্তা শোনাও।
অ্যান্টনিওঃ আপন বিপদ নিয়ে আমি কি বোকার মত আচরণই না করছি। প্রিয় বন্ধু, আজ রাতেই তোমাকে বায়ুবেগে রোমে রওয়ানা হতে হবে। তোমার কর্মধারার উপরই আমার জীবন নির্ভর করছে।
ডেলিওঃ আমাকে অবিশ্বাস করো না।
অ্যান্টনিওঃ এ ধরনের প্রবণতা আমার মোটেও নেই। তথাপি মনের ভয় থেকে আমি বিপদের আভাস পাচ্ছি।
ডেলিওঃ বিশ্বাস কর, এসব তোমার ভয়াতুর মনের কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। অমঙ্গলের কথা চিন্তা করার সময় আমরা বড়ই কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে উঠি। লবণ পড়ে গেলে, আমাদের চলার পথ দিয়ে খরগোশ দৌড়ে গেলে, ঘোড় হোঁচট খেলে, ঝি ঝি পোকা ডাকতে থাকলে অথবা আমাদের নাক দিয়ে রক্ত পড়লে আমাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। বিদায়, জনাব দোয়া করি যেন সৌভাগ্যবান পিতা হওয়ার পরিপূর্ণ আনন্দটা লাভ করতে পার। আর আমার আনুগত্য সম্বন্ধে অন্তরে লিখে রেখো যে পুরানো বন্ধুরা পুরানো তরবারীর মতোই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য।
[ক্যারিওলার প্রবেশ]
ক্যারিওলাঃ স্যার, আপনি এখন এক পুত্রসন্তানের সুখী পিতা। আপনার স্ত্রী এই শিশুর দায়িত্ব আপনার উপর অর্পণ করেছেন।
অ্যান্টনিওঃ এই সুখবর আশীর্বাদস্বরূপ। ঈশ্বরের দোহাই, শিশুটিকে ভালভাবে দেখা শুনা কর। আমি এক্ষুনি ওর কোষ্ঠী তৈরী করাতে যাচ্ছি।
[প্রস্থান]

নাটকের উপরের অংশের টিকাসমূহঃ 
দ্বিতীয় অঙ্কঃ প্রথম দৃশ্য।
১. নাইট ক্যাপ ও সাদা সিল্কের তৈরী এক ধরনের আঁটসাট টুপি। এককালে দিনের বেলায়ও পরচুলার পরিবর্তে এই ধরনের টুপি পরার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। যে লোেকরা নানা প্রকার কল্পিত রোগে ভুগত তারাই এই টুপি বেশী পরত।
২. যথাযথ বাংলা প্রতিশব্দ না থাকায় এখানে একটি পংক্তি অনুবাদ থেকে বর্জন করা হয়েছে। পংক্তিটি নিম্নরূপঃ
As the most ulcerous wolf and swinish, measle.
৩. রাজা পেপিনঃ ফ্রাঙ্কদের রাজা। জন্ম ৭১৫ খ্রীঃ মৃত্যু ৭৬৮ খ্রীঃ ফ্রাঙ্কিশ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা।
৪. টিথঃ পূর্বে রেওয়াজ ছিল এলাকাবাসীদের প্রত্যেককে গীর্জার প্রশাসনিক খরচ মিটানোর জন্য নিজ আয়ের অথবা নিজ সম্পত্তির এক-দশমাংশ গীর্জায় জমা দিতে হবে। একেই বলা হতো টিথ। কোন ব্যক্তি তা করতে ব্যর্থ হলে, উক্ত গীর্জার পাদ্রী টিথ আদায়ের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারত।

দ্বিতীয় অঙ্কঃ দ্বিতীয় দৃশ্য
১. গ্লাস হাউসঃ কাচ দ্বারা পরিবেষ্টিত এক ধরনের গ্রীন হাউস যেখানে দুর্লভ জাতের উদ্ভিদকে খারাপ আবহাওয়ার কবল থেকে আড়াল করে রাখা হয়। ওয়েবস্টার সম্ভবত ব্ল্যাকফিয়ার্স থিয়েটারের নিকটবর্তী গ্লাস-হাউসটির কথাই উল্লেখ করেছেন।
২. জুপিটারঃ দেবতাদের রাজা। গ্রীক পুরাণে তাকে জিউস নামে অভিহিত করা হয়েছে। কথিত আছে যে বজ্রকে তিনি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতেন।
৩. ডানাঃ সে আর্গোসের রাজা অ্যাক্রাইসিউসের কন্যা। রাজা তাকে একটা ব্রোঞ্জ নির্মিত স্তম্ভের মাঝে বন্দী করে রেখেছিলেন। জুপিটার তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। প্রহরীদের ফাঁকি দেওয়ার জন্য তিনি স্বর্ণবৃষ্টির আকারে তার সাথে দেখা করেন ও মিলিত হন। মিলনের ফলে পার্সিউস নামক এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। ডানার নাম উল্লেখের মধ্য দিয়ে বসোলা বুঝাতে চেয়েছে যে মহিলারা স্বর্ণের বিনিময়ে প্রেম ও ইজ্জত উভয়ই বিকিয়ে দিতে পারে।

1 comment: