![]() |
The Lotos Eaters - Alfred Tennyson - Bangla Translation |
The Lotos Eaters - Alfred Tennyson - Bangla Translation
সাহস রাখ! [ইউলিসিস] বলে ইশারা করলেন [দূরে] ভূমির দিকে।
শীঘ্রই এই অধিরোহী [পর্বতাকৃতির] ঢেউ আমাদেরকে উপকূলে নিয়ে যাবে,
বিকেল বেলায় এলো তারা উপকূল ভূমিতে
যেখানে চিরকালই যেন মনে হয় বিকেল বেলা।
পুরো উপকূলব্যাপী অলস বাতাস আছড়ে পড়ে।
স্বপ্ন-ক্লান্ত কেউ যেন শ্বাস ফেলে।
উপত্যকার শিরোপরি হাসে পূর্ণিমাশশী।
ধোঁয়ার কুণ্ডলীসম পাক খেয়ে বহে ছোট নদী।
পাহাড়ি ধাপে ধাপে থেমে থেমে বয়ে যায়।
নদীর দেশ এ দেশ, নীচের দিকে বহমান ধোঁয়ার মতো নদী,
পাতলা ঘোমটার মতো পতিত
কোন নদী নামে নীচের দিকে
কোনটা আলো ছায়াতে কেঁপে কেঁপে চলে
চলে যায় অলস ফেনা ছড়াতে ছড়াতে সাগরের দিকে
অনেক দুরের ভেতরের তিনটি পাহাড়ের চূড়া হতে,
পুরনো তুষারে আবৃত তিনটি চূড়া
সূর্য অস্ত যাবার সময় লালিমাযুক্ত আর রাতের শিশিরে সিক্ত
পাইন লতার ঘন ছায়ার নীচে।
মোহনীয় রক্তিমাভায় সূর্য নামে পাটে-
পশ্চিমাকাশ লালাভাযুক্ত;
পর্বতের উপত্যকায় ছাড়ানো
অনেক ভেতরে দেখা যায় পাহাড়ি হলুদ সমতল ভূমি
পাম গাছে ঘেরা, অনেক খাজ খাঁজ ঢালু,
ফসলের মাঠ আর সরু গুল্মে ছাওয়া।
এ ভূমে সবকিছু সদা সর্বদা একই রকম মনে হয়!
জাহাজের খোলের চারপাশে সুরুজের বর্ণচ্ছটায়।
কালো ফ্যাকাসে মুখ,
অধনির্মিলিত নয়নে পদ্মভুক্ত বিমর্ষজনেরা এলো।
সেই মোহনীয় লতার কতক শাখা-প্রশাখা আনল বয়ে তারা।
ফুলে ভরা, ফলে ভরা,
তাদের সবাইকে দিল।
প্রত্যেকে,
যারা এ ফল গ্রহণ করল।
খেল এবং ভাবল
দূরে,
বহু দূরে গেছে সমুদ্র, যেন বিলাপ করে,
তীর থেকে বহু দূরে, কেউ যদি কথা বলে,
তার কথা
কবর থেকে আসা ক্ষীণ কণ্ঠস্বর যেন,
মনে হয় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তবু জেগেই রয়,
গান বাজে কানে তার হৃদস্পন্দনের।
তারা বসে আছে হলুদ বালু চরে,
মাঝামাঝিতে চন্দ্র আর সূর্যের
ভাল লাগে ভাবতে পিতৃভূমির কথা।
ছেলেমেয়ে,
স্ত্রী, দাসদাসীর কথা;
কিন্তু তারপরও
ক্লান্ত সাগর, ক্লান্ত বৈঠা,
অহেতুক ফেনা তোলা বিরাট ক্লান্ত জলরাশি।
অতঃপর কে যেন একজন বলে উঠল, আমরা আর ফিরব না।
সবাই তখনই গেয়ে উঠল, “আমাদের বাড়ি
অনেক দূরে, সাগরের ওপারে আমরা আর দূরে ভ্রমণ করব না।
নাবিকদের সমবেত সঙ্গীত
১
কোমল মধুর সঙ্গীত সুধা, ঝরে পড়ে যেখানে।
ঘাসের উপর গোলাপের পাপড়ি পড়ার থেকেও কোমল,
শান্ত জলে নিশির শিশির পড়ার চেয়েও নরম;
হৃদয়ে বইয়ে দেয় এ সঙ্গীত অনাবিল শান্তি।
অবসাদময় চোখে ঢলে পড়া চোখের পাতার চেয়েও সুপ্তিময়,
এ সঙ্গীত বয়ে আনে সুখের নিন্দ্রা, শান্তিময় গগন হতে।
হেথায় গভীর শীতল শেওলার
শেওলায় ঘেরা আইভি লতা
তটিনীর বুকে কাঁদে প্রস্ফুটিত পুস্পরাজি
শৈলস্তবকে ঘুমে ঝুলে আফিমবৃক্ষ।
২
মোরা কেন রব এত বেশি ভারে ভারাক্রান্ত,
মোরা ভুগব কেন তীব্র যন্ত্রণায়,
ক্লান্তির পরে সবাইতো একটু আরাম করে?
সবার বিশ্রাম আছে; শুধু আমরা খেটে যাব কেন,
আমরাই কেবল খেটে মরি, সকল সৃষ্টির সেরা যারা
আর যন্ত্রণায় কাতরাই,
এক যন্ত্রণা থেকে আর এক যন্ত্রণায় নিক্ষিপ্ত হই;
আমাদের পাখাকে কভু বিরাম দেই না,
শুধু উড়তেই থাকি, উড়তেই থাকি,
আমাদের ভ্রূ ভিজবে না কভু তার প্রলেপে;
হৃদয়ের সেই গান শুনব না,
‘বিশ্রাম ছাড়া আনন্দ কোথায়।
আমরা এতটা খেটে মরব কেন সৃষ্টির সেরা হয়ে?
৩
দেখ! বন-বনানীর মাঝে।
মুকুল হতে গজায় ভাজ করা কচি পাতা।
শাখায় শাখায় বাতাস দোল দিয়ে যায়, সেথায় তারা
বেড়ে উঠে সবুজে শ্যামলে, বেড়ে উঠে অযত্বে,
দুপুর বেলা সূর্যের আলো, রাতের বেলা চাঁদের শিশির;
পান করে হলুদ বর্ণে,
বাতাসে ভেসে ভেসে এক সময় ঝরে যায় তারা
দেখ! গ্রীষ্মকালীন খরতাপে মিষ্টি হয়ে,
রসপূর্ণ আপেল, পাকা হয়,
পোক্ত হয়।
ঝরে পড়ে শরতের কোন এক নীরব রজনীতে
নির্দিষ্ট দিনে।
ফুল ফোটে নিজ নিজ স্থানে।
ফুল ফোটে, বিবর্ণ হয়,
ঝরে পড়ে বিনা ক্লেশে,
শিকড় বিস্তার করে সুফলা মাটিতে।
৪
অন্ধকার নীলাকাশ,
যেন অন্ধকার নীল সায়রের ছাদ।
মৃত্যুই জীবনে শেষ; আহা,
তবে
এ জীবনে এত কাজ, এত শ্রম কেন?
আমাদেরকে একাকী ছেড়ে দাও। সময় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে,
ক্ষণতরে থাকতে দাও নিরিবিলি। এসব কি টিকে থাকবে?
সবকিছুই ছিনিয়ে নেয়া হবে।
তলিয়ে যাবে অতীতের গহীন গহ্বরে।
আমাদেরকে একাকী থাকতে দাও কিইবা বা সুখ আছে আমাদের,
খারাপের সাথে যুদ্ধ করে? শান্তি কি আসবে
উত্তাল তরঙ্গমালায় চড়ে?
সব কিছুর বিশ্রাম আছে সবাই কবরে যাওয়ার তরে বেড়ে উঠি
নীরবে নিভৃতে পেকে উঠি, ঝরে যাই,
শেষ হয়ে যাই
আমাদের বিশ্রাম দাও অথবা অন্ধকার মৃত্যু, অথবা স্বপ্নময় বিশ্রাম দাও।
৫
কী মধুর শুনতে ভাটি অঞ্চলের স্রোতস্বিনীর ধ্বনি
যেন অর্ধনির্মীলিত আঁখি।
ধীরে ঘুমিয়ে পড়া, আধা-স্বপনে!
স্বপ্ন আর স্বপ্ন দেখা এই আকাশভরা আলোয়।
যে আলোতে উচু চিরসবুজ কুঞ্জও আলোকিত;
ফিসফিসানো কথা শুনতে, একে অন্যের;
দিনের পর দিন লটোস ফল খেয়ে,
ফেনার বুদবুদ ছড়ানো রয়েছে সমুদ্র পারে
আর মাখনের মতো ফেনার রেখা দেখতে কতই না আনন্দ।
মোদের হৃদয় এবং আবেগ সম্পূর্ণরূপে
দিয়ে দিতে, মধুমনা দুঃখকে
স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠে
ছোট বেলার পরিচিত মুখ সবই
ঘাসের স্তুপে,
দুই মুঠি সাদা বালি পিতলের ভস্মাধারে বন্ধ।
৬
স্মৃতির কোঠায় বিবাহিত জীবনের স্মৃতি বড় মধুময়
আরো মধুময় প্রেয়সীর শেষ আলিঙ্গন
আর প্রেয়সীর অশ্রু কিন্তু সব বদলে গেছে;
নিশ্চিত করে বলা যায় যে, রান্নাঘরের চুলা এখন ঠাণ্ডা
আমাদের ছেলেরা এখন উত্তরাধিকারী,
আমাদের দৃষ্টি তাদের কাছে
অদ্ভুত বলে মনে হয়,
আমরা এখন ভূতের মতো, গেলে তাদের ফুর্তি নষ্ট হবে।
দেশে আজ রাজকুমারেরা১ দুঃসাহসী।
আমাদের সম্পদরাজি গিলে বসেছে, চারণ কবি গেয়ে যায়
দশ বছরব্যাপী ট্রয় যুদ্ধের গাঁথা,
আমাদের মহান কীর্তির কথা, যা আজ অর্ধ-বিলুপ্ত।
আমাদের ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশে এখন নানা গোলমাল?
যা ভেঙ্গে গেছে তা ভাঙ্গাই থাকতে দাও
আইন শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা যাবে না।
মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য বিরাজে দেশে
দুর্যোগের উপর দুর্যোগ, বেদনার উপর বেদনা
সুদীর্ঘ পরিশ্রম, বুড়ো হওয়া এমনকি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত,
যুদ্ধে বিদীর্ণ হৃদয়ে শ্রমসাধ্য কাজের বোঝা
ঝাপসা চোখে চালক তাকিয়ে থাকে আকাশের তারার পানে।
৭
তবে,
অ্যামার্যান্থ [amaranth] এবং মলি [moly] ফুলে হেলান দিয়ে,
কী মিষ্টি বাতাস ধীরে বয়ে যায় আর আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
অর্ধনির্মীলিত চোখে,
আঁধার ভরা পবিত্র গগনতলে
ধীরে বহে আলোকিত সুদীর্ঘ স্রোতস্বিনী
রক্তবর্ণ পাহাড় হতে
যেন শোনা যায় শিশির পতনের ধ্বনি
আঙ্গুরলতায় ঘেরা গর্তে গর্তে,
মুক্তার দানার মতো ঝরছে জলের ফোঁটা
যেন জান্নাতী মালা গাঁথা হচ্ছে।
শুনতে শুধু সমুদ্রের গর্জন দূর থেকে
শুধু শুনতে পাইন গাছের তলে বসে এ মধুর গান।
৮
লটোস (Lotos) ফুল ফুল ফোটে পর্বতচূড়ান্ত নীচে
সরু নদীর বাঁকে বাঁকে লটোস দোলে মৃদু বাতাসে।
সারাটি দিন ধরে বহে বায়ু মৃদু লয়ে
গুহার প্রতিটি শূন্য গর্তের মধ্য দিয়ে
পাক খেয়ে খেয়ে, মসলার ক্ষেতে হলদে লটোসের ধূলো ওড়ে।
আমরা যথেষ্ট কাজ করছি, ঘুরছি কেবল।
উন্মাতাল সমুদ্রে জাহাজের গলুই থেকে পেছনে
দৌড়িয়েছি প্রাণপণে,
যেথায় সমুদ্র দানব ফেনার পর ফেনা তুলছে।
চলো আমরা সবাই একটা শপথ করি আর সবাই এক মনে তা রক্ষা করি
এই শুন্য লটোসের দেশে আমরা শুয়ে থাকব যেমন
পর্বতে শুয়ে থাকা (কল্পিত) দেবতা গুলোর মতো একত্রে যারা, মানব জাতীর প্রতি উদাসীন
যারা পান করে শুধু অমৃত এবং দূরে আকাশে বজ্রপাতের বর্ষণ
নীচে পার্বত্য উপত্যকা আর ঊর্ধ্বে হালকাভাবে কোঁকড়ানো মেঘমালা,
স্বর্ণালী নীড়ের চারপাশে উজ্জ্বল আভার জগৎ;
গোপনে গোপনে হাসে তারা, দুর্দশাগ্রস্ত দেশটা দেখে
দুর্ভিক্ষ,
প্লেগ, ভূমিকম্প, গর্জনশীল সমুদ্র, তপ্ত বালুকারাশি
যুদ্ধ,
জ্বলন্ত শহর,
ডুবন্ত জাহাজ, প্রার্থনারত হাত।
কিন্তু তারা হাসে, (মানবের)কষ্টের গানে তারা (আনন্দের) সুর খুজে পায়।
বেদনা ভারাক্রান্ত অতীতের,
অতি জোরে উচ্চারিত হয় সামান্য কাহিনী
মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত, শোষিত মানুষের
অতিকষ্টে বছরের খাদ্যশস্য, সুরা আর সামান্য তেল করে জমা;
যতক্ষন না তারা ধ্বংস না হয়, দুর্ভোগ না পোহায়, কেউ যেন ফিসফিস করে বলে, নিচের কষ্টের স্থানে,
অন্তহীন যন্ত্রণা সহ্য করে, অন্যরা বাস করে (আনন্দে) ইলাইসিয়ান উপত্যকায়,
ক্লান্ত হাত-পা ছেড়ে দিয়ে এসফোডেল (asphodel) ফুলের তূপে।
অবশ্যই অবশ্যই শ্রম হতে বিশ্রাম মধুরতর, আরো (মধুরতর) উপকুলে (বসে থাকা)
মধ্যসাগরে পরিশ্রম, জোর বাতাস, ঢেউ আর দাঁড় (টানার) থেকে।
ওহে, নাবিক ভাইয়েরা, আমরা আর (সমুদ্রে) ঘুরে বেড়াবো না।
The Lotos Eaters - Alfred Tennyson - Summary, Analysis and Discussion - in Bengali
টিকাঃ
১। গ্রীক বীর ইউলিসিসের স্ত্রী পেনিলোপের পাণিপ্রার্থীর দল ইউলিসিসের অনুপস্থিতিতে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে আসে।
No comments:
Post a Comment