Total Pageviews

Thursday, June 9, 2016

টুনটুনি আর নাপিত


  টুনটুনি গিয়েছিল বেগুন গাছের ডালে নাচতে। নাচতে-নাচতে খেল বেগুন কাঁটাঁর এক খোঁচা। তা থেকে তার হল বিশাল বড় এএক ফোড়া।

ও মা,এখন কি হবে? এত্ত বড় ফোড়া! কি করে সারবে?

টুনটুনি একে জিজ্ঞাসা করে, তাকে জিজ্ঞাসা করে। সবাই বলে, ওটা নাপিত দিয়েই কাটিয়ে ফেল-
তে হবে"।
তাই টুনটুনি নাপিতের কাছে গিয়ে বললে, নাপিতদাদা, নাপিতদাদা, আমার ফোড়াটা কেটে পরিষ্কার করে দাও না।

নাপিত তার কথা শুনে ঘাড় বাকিয়ে নাক সিঁটকিয়ে বলল, ঈস! আমি রাজা চুল দাড়ী  কামাই, আমি তোর ফোড়া কাটতে যাব। আমার  আর কোন কাজ নাই নাকি!!!!


টুনটুনি বলল,  আচ্ছা, দাড়াও, দেখাচ্ছি মজা,   ফোড়া কাটতে যাও কি না,  তখন দেখব।

বলে সে রাজার কাছে গিয়ে বিচার দিল, রাজামশাই, আপনার নাপিত  আমার ফোড়া কেটে দিচ্ছে না, ওকে সাজা দিতে হবে!

সুনে রাজামশাই হো-হো করে হেসে দিলেন, বিছানায় গড়াগড়ি দিলেন, কিন্তু নাপিতকে কিছু বললেন না। তাতে টুনটুনির রাগ আরো বেড়ে গেল। সে ইঁদুরের কাছে গিয়ে বলল, ইঁদুরভাই, ইঁদুরভাই, বাড়ি আছ নাকি?


ইঁদুর বলল, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?

টুনটুনি বললে, ভাত খাই, তবে যদি এক কাজ কর।


ইঁদুর বললে, কি কাজ?

টুনটুনি বলল, রাজামশাই যখন ঘুমিয়ে থাকবেন, তখন গিয়ে তাঁর ভুঁড়িটা কেটে ফুটো করে দিতে হবে।

তা শুনে ইঁদুর জিভ কেটে কানে হাত দিল, আর বলল, ওরে বাবারে! আমি তা পারব না। তাতে টুনটুনি রাগ করে বিড়ালের কাছে গিয়ে বললে, বিড়ালভাই, বিড়ালভাই, বাড়ি আছ?

বিড়াল বললে, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?

টুনটুনি বললে, ভাত খাব, যদি ইঁদুর মার।

বিড়াল বলল, এখন আমি ইঁদুর-টিদুর মারতে পারব না, আমার খুব ঘুম পেয়েছে। শুনে টুনটুনির রাগ আরো বেড়ে গেল।লাঠির কাছে গিয়ে বললে, লাঠি ভাই, লাঠি ভাই, বাড়ি আছ?

লাঠি বললে, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?

টুনটুনি বললে, তবে ভাত খাই, যদি বিড়ালকে ঠেঙাও।

লাঠি বললে, বিড়াল আমার কি ক্ষতি করেছে যে আমি তাকে মারতে যাব? আমি তা পারব না। তখন টুনটুনি আগুনের কাছে গিয়ে বলল, আগুনভাই, আগুনভাই, বাড়ি আছ?

আগুন বলল, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?

টুনটুনি বলল, ভাত খাব, যদি লাঠি পোড়াও।

আগুন বলল, আজ অনেক কিছু পুড়িয়েছি, আজ আর কিছু পোড়াতে পারছি না। তাতে টুনটুনি তাকে খুব করে বকে, সাগরের কাছে গিয়ে বললে, সাগরভাই, সাগরভাই,তুমি কি বাড়ি আছ?

সাগর বললে, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?

টুনটুনি বললে, ভাত খাব, যদি তুমি আগুন নেভাও।

সাগর বললে, আমি তা পারব না। তখন টুনটুনি হাতির কাছে গিয়ে বললে, হাতিভাই, হাতিভাই, বাড়ি আছ?

হাতি বললে, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?

টুনটুনি বললে, ভাত খাব, যদি সাগরের পানি সব খেয়ে ফেল।

হাতি বললে, অত পানি খেতে পারব না, আমার পেট ফেটে যাবে।

কেউ তার কথা শুনল না দেখে টুনটুনি শেষে মশার কাছে গেল। মশা দূর থেকে তাকে দেখেই বললে, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?

টুনটুনি বললে, তবে ভাত খাই, যদি হাতিকে কামড়াও।



মশা বললে, সে আবার একটা কথা! এখুনি যাচ্ছি। দেখব আজ হাতির চামড়া কত শক্ত! বলে, সে সকল দেশের সকল মশাকে ডেকে বললে, তোরা আয় তো রে ভাই, দেখি হাতি বেটার কত শক্ত চামড়া। অমনি পীন্-পীন্-পীন্-পীন্ করে যত রাজ্যের মশা, বাপ বেটা ভাই বন্ধু মিলে হাতিকে কামড়াতে চলল। মশায় আকাশ ছেয়ে গেল, সূর্য ঢেকে গেল। তাদের পাখার হাওয়ায় ঝড় বইতে লাগল। পীন্-পীন্-পীন্-পীন্ ভয়ানক শব্দ শুনে সকলের প্রাণ কেঁপে উঠল। তখন

    হাতি বলে, সাগর এর পানি খাই!
    সাগর বলে, আগুন নিভাই!
    আগুন বলে, লাঠি পোড়াই!
    লাঠি বলে, বিড়াল পিটাই!
    বিড়াল বলে, ইঁদুর মারি!
    ইঁদুর বলে, রাজার ভুঁড়ি কাটি!
    রাজা বলে, নাপিত বেটার মাথা কাটি!

নাপিত হাত জোড় করে কাঁপতে কাঁপতে বললে, ছেড়ে দাও , টুনিদাদা! এস টুনিদাদা! এস তোমার ফোড়া কাটি।

তারপর টুনটুনির ফোড়া সেরে গেল, আর সে ভারি খুশি হয়ে আবার গিয়ে নাচতে আর গাইতে লাগল টুনটুনা টুন্ টুন্ টুন্! ধেই ধেই!


No comments:

Post a Comment