Total Pageviews

Sunday, November 3, 2019

Life and Works - Homer



হোমার: জীবন কর্ম
প্রাচীন গ্রীক সাহিত্যের সেরা দুটি কর্ম ইলিয়াড (Iliad) ও অডিসির (Odysse) স্রষ্টা হোমারের জন্মকাল তার জীবন সম্পর্কে খুব একটা তথ্যে পাওয়া যায় না ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের (Herodotus) মতে, গ্রীক কবি হেসিওড (Hesiod) এবং হোমার হেওডোটাসের প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে জীবিত ছিলেন সে হিসেবে সময়টা আনুমানিক ৮৫০ খ্রিষ্টপূর্ব রোমান লেখক আর্টেমন (Artemon) বলেন হোমারের ছাত্র মিলেটাসের আর্কটিনাস (Arctinus) এর জন্ম সাল হল ৭৪৪ খ্রিস্টপূর্ব। এটা থেকে ধারনা করা যায় হোমার খ্রীস্ট এর জন্মের ৭৫০ থেকে ৭০০ সালের দিকে জীবিত ছিলেন। পরবর্তীকালে গবেষকগণ হোমারকে দশম-একাদশ খ্রিষ্টপূর্ব কালের কবি হিসেবে চিহ্নিত করেছেনপ্রাচীন গ্রিসের ঐতিহ্য, ভাষা এবং কাব্য-গাথা পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয় যে, হোমারের কাব্যগাথা রচিত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম অথবা নবম শতকে। নির্দিষ্ট কোনো সময়ের গণ্ডিতে তাঁর সাহিত্যকর্মকে বাধা যায় না। আধুনিক কালের গবেষকগণ ধারণা করেন, হোমারের বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়াড রচিত হয় ৭৫০ খ্রিষ্টপূর্ব কালে আধুনিক কালের গবেষকগণের এই মতটাকেই অনেকে সঠিক বলে বিবেচনা করেন কম করে হলেও গ্রিসের সাতটি নগরী হোমারের জন্মস্থান হিসেবে দাবি করে থাকে সঠিক তথ্যের অভাবে দাবিগুলোও মেনে নেয়া দুষ্কর হোমার সম্ভবত মূল গ্রিসের অধিবাসী ছিলেন না তিনি সম্ভবত এশিয়া মাইনরের পশ্চিম ভাগে অবস্থিত কিয়স দ্বীপ হতে আগমন করেন ধারণা করা হয়, তাঁর পূর্বপুরুষেরা গ্রিসের পূর্বভাগ কিংবা এশিয়া মাইনরের গ্রামাঞ্চলে বাস করতেন এশিয়া মাইনরে গ্রিকদের যে উপনিবেশ ছিল তারই কোনো একটি স্থানে হোমার জন্মগ্রহণ করেন এবং জীবন যাপন করেন আর সেখানেই হয়ত তাঁর বিখ্যাত মহাকাব্যদ্বয় ইলিয়াড ওডিসি রচনা করেন সাইমি স্মার্না নামক দুটো নগরী হোমারের জন্মস্থান বলে দাবি করা হয়, আবার কারো কারো মতে, কিয়স দ্বীপই হোমারের আদি বাসস্থান তবে গবেষকগণের মতে কিয়স দ্বীপে তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে হোমার সম্পর্কে পুরনো একটি বিশ্বাস প্রচলিত যে, তিনি অন্ধ ছিলেন কিন্তু মতের পেছনে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় না এটাও প্রচলিত যে, অন্ধ কবি হোমার প্রাচীন গ্রিসের বীরগাথা সঙ্গীতের মাধ্যমে গাইতেন তাঁকে চারণকবি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয় পরবর্তীকালে গবেষকগণের মধ্যে ইলিয়াড এবং ওডিসি কাব্য দুটো নিয়েও বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে, কেউ কেউ মত প্রকাশ করেন যে ইলিয়াড ওডিসি একই জনের রচনা নয় হোমার শুধু ইলিয়াড রচনা করেছেন, ওডিসি রচনা করেননি কিন্তু বর্তমানকালের গবেষকগণ একমত হয়েছেন যে, দুটো মহাকাব্যই একই কবির রচনা তাদের মতে, এশিয়া মাইনরের কোনো একটি অঞ্চলে খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতকে হোমার ইলিয়াড ওডিসি মহাকাব্যদ্বয় রচনা করেন হোমারের কালে কোনো লিখনরীতি প্রচলিত ছিল না বলে ধারণা করা হয় হোমারের কাহিনী রচিত হয়েছে মুখে মুখে আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকে চারণকবিরা মাইসেনীয় রাজবৃত্ত থেকে কাব্যের এই অলিখিত ধারাটি বহন করতে থাকেন পরবর্তীকালে হোমারের মাঝে এসে এটি পূর্ণাঙ্গ বিকাশ লাভ করে মূল গ্রিস ভূখণ্ডে খ্রিষ্টপূর্ব ষোড়শ শতকে এক উন্নততর সভ্যতার বিকাশ ঘটে পৃথিবীর ইতিহাসে এটি মাইসেনীয় সভ্যতা বলে পরিচিত হোমারের মহাকাব্য এই মাইসেনীয় সভ্যতার পটভূমিতে রচিত মাইসেনি, টিরিনস আর্গসে এই পুরনো সভ্যতার সন্ধান মিলেছে, এসব স্থানে সুরম্য রাজকীয় অট্টালিকা এবং সুরক্ষিত সুরম্য রাজকীয় কবরস্থানের সন্ধান মিলেছে, যেসব রাজকীয় প্রাসাদের সাথে ট্রয়ের প্রাসাদের মিল খুঁজে পাওয়া যায় হোমারের কাব্যে আমরা ধরনের রাজকীয় প্রাসাদের বর্ণনা পাই খ্রিষ্টপূর্ব তেরো শতকে উত্তর গ্রিসের একিয়ানরা খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে কালের বীরযুগ বলে চিহ্নিত সময়ে তারা সমুদ্র যাত্রায় বেরিয়ে পড়ে মিশরীয় প্রাচীন লিপি থেকে জানা যায় যে, এই একিয়ানরা ১২২৩ খ্রিষ্টপূর্বকালে মিশর দখল করে খ্রিষ্টপূর্ব তেরো শতকে একিয়ানরা যে ট্রয়নগরীর ধ্বংস সাধন করে এটি ঐতিহাসিক ঘটনা ট্রয়নগরীর ধ্বংস সাধন করার পরই একিয়ানদের সুনাম, সাহস শক্তি বেড়ে যায় আর এতে করে উত্তর গ্রিস দক্ষিণ গ্রিস একীভূত হয় একিয়ানদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আগে ট্রয়নগরী কম করে হলেও ছয়বার আক্রান্ত হয় এই ধ্বংসাবশেষের উপরেই খ্রিষ্টপূর্ব ষোড়শ শতকে সপ্তমবারের মতো ট্রয়নগরী গড়ে ওঠে ট্রোজানদের সাথে গ্রিক বা একিয়ানদের বিবাদের মূল কারণ হল সামুদ্রিক বাণিজ্য কারণ সামুদ্রিক বাণিজ্যের একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করত, ট্রোজানরা তাদের হাতেই ছিল এটির কর্তৃত্ব আর এই সামুদ্রিক বাণিজ্যের উপর নির্ভর করেই ট্রয় ক্রমে সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে ট্রোজানদের সাথে গ্রিসীয়দের বিবাদের আরও একটি অন্যতম কারণ ছিল ট্রয়ের শক্তির দিকটি। কারণ এশিয়া মাইনরের পশ্চিম উপকূলে ট্রয় ছিল একটি শক্তিশালী রাজ্য আর গ্রিসীয়রা যাতে এশিয়ার উপকূলবর্তী দ্বীপগুলোতে বসতি স্থাপন না করতে পারে তার প্রতি অতিমাত্রায় সচেতন ছিল ট্রোজানরা।
ট্রোজানদের এই যুদ্ধংদেহী নীতির কারণে গ্রিকরা পূর্বাঞ্চলে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না। আর ট্রয়ের কারণে গ্রিকরা স্বাধীনভাবে বাণিজ্য চালাতেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এসব কারণে উত্তর ও দক্ষিণ গ্রিসের রাজ্যগুলোর প্রধানেরা একত্রিত হয়ে ট্রয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করে। এশিয়ার পশ্চিম উপকূলে বসবাসকারী লাইসিয়ামরাও এ যুদ্ধে যোগদান করে। জনশ্রুতিমতে, নয় বছর ধরে ট্রয় অবরোধ করে রাখে গ্রিকরা এবং দশম বর্ষে ট্রয় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটে।
হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াড মাইসেনিয়ান সভ্যতার শেষ দিকের কাহিনী অবলম্বনে রচিত এর ঘটনাকাল খ্রিষ্টপূর্ব তেরো শতক হোমারের মহাকাব্যে মাইসেনিয়ান সভ্যতার কৃষ্টির আভাস মেলে হোমার তার কাহিনী কৃত্রিম বিষয় অবলম্বন করে সাজিয়েছেন এতে গ্রিসের অন্ধকার যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব একাদশ থেকে অষ্টম শতক) এবং এশিয়া মাইনরের অষ্টম শতকের রূপ ফুটে উঠেছে কিন্তু তাঁর মহাকাব্যে মাইসেনিয়ান সভ্যতার কৃষ্টি-কালচারের আভাস খুব কমই মেলে তিনি গ্রিক ধ্রুপদী যুগের দুয়ারে দাঁড়িয়ে পাঁচ বছর আগের মাইসেনীয় সভ্যতা থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন এসব কাহিনীর মূল ধারা ছিল কিংবদন্তি লোক গাথা; যা সে সময়ে চারণকবিরা মুখে মুখে গেয়ে বেড়াতেন হোমার এসব বিচ্ছিন্ন উপাদানসমূহ একত্রিত করে একটি সামগ্রিক রূপ দেন শুধু এটাই নয়, তিনি বিচ্ছিন্ন উপাদানগুলোকে একত্রিত করে একটি শৈল্পিক রূপ প্রদান করেন খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে হোমারের কাব্য জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠে এবং তিনি জাতীয় কবির মর্যাদা পান তাঁর এই মর্যাদা অদ্যাবধি অটুট আছে হোমারের মৃত্যু নিয়েও বিতর্কের অবসান হয়নি কোনো কোনো গবেষকের মতে, তিনি আইওস দ্বীপে মৃত্যুবরণ করেন জনশ্রুতি অনুযায়ী তিনি নিজেই একটি সমাধিলিপি রচনা করেছিলেন এই সমাধিলিপি রচনা করার তিন দিন পরেই তিনি লোকান্তরিত হন


No comments:

Post a Comment