![]() |
As you like it - William Shakespeare - Bangla Translation |
As you like it - William Shakespeare -
Bangla Translation - part - 5 -
অ্যাজ ইউ লাইক ইট - শেক্সপিয়ার- বাংলা অনুবাদ
৫
বনের অন্য
প্রান্তে খালি অবস্থায় পড়েছিল মেষপালকের একটি কুটির। আজ ক’দিন হল সেখানে এসে বাসা বেঁধেছে
মাঝবয়সি এক লোক। দুজন সমবয়স্ক যুবক-যুবতিও রয়েছে তার সাথে। তাদের দেখলেই বোঝা
যায় তারা উভয়ে ভাই-বোন। তবে ছেলেটি তার বোনের চেয়েও সুন্দর দেখতে, আর তার বোনের চেয়েও বেশ লম্বা-চওড়া। মেয়েটির নাম অ্যালিয়েনা।
সে তার ভাইকে ডাকে গ্যানিমিড বলে। আর মাঝবয়সি লোকটিকে উভয়ে টাচস্টোন বলে ডাকে, যাতে মনে হয় লোকটি উভয়ের বাবা, জ্যাঠা বা কাকা
কোনোটাই নয়। কখনও কখনও গ্যানিমিড তার বোন অ্যালিয়েনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বনের
ঝরনার ধারে। ডিউকের সঙ্গীদের কারও সাথে দেখা হলে আলাপ করে, গান
গায়, হাসি-মশকরা করে কাটিরে দেয় সময়।
অরল্যান্ডোর আর
দোষ কী! অনেক দিন আগে সে একবারই মাত্র দেখেছিল রোজালিল্ড আর সিলিয়াকে। তাই বনের
মাঝে নতুন সাজে দেখে সে তাদের চিনতে পারল না। একবারও টের পেল না যে গ্যানিমিউই
রোজালিন্ড-তাকে একজন পুরুষ মানুষ ভেবেই সে তার সাথে আলাপ করতে গেল। রোজালিন্ড ঠিকই
চিনতে পারল অরল্যান্ডোকে। একদিন তাদের কুটিরে আসার জন্য অরল্যান্ডোকে আমন্ত্রণ
জানাল রোজালিন্ড।
অরল্যান্ডোর
মস্ত গুণ সে ভালো কবিতা লিখতে পারে। সে একাকী বনের মাঝে ঘুরে বেড়ায় আর তার মনের
কথাগুলি বেরিয়ে আসে কবিতার আকারে। সে সব কবিতার বিষয়বস্তু তার মানসী রোজালিন্ড।
তাকে নিয়েই মুখে মুখে কবিতা রচনা করে অরল্যান্ডো। হাতের কাছে কাগজ কলম না পেলে গাছের বাকলে ছুরি দিয়ে
ফুটিয়ে তোলে সে কবিতা। শেষে এমন অবস্থা দাড়াল, যে বনের ভিতর তাদের আশেপাশের একটি গাছও আর অবশিষ্ট
রইল না।
বনের মাঝে ঘুরে
বেড়াতে বেড়াতে বহুবার রোজালিন্ড ও সিলিয়ার চোখে পড়েছে গাছের বাকলে খোদাই করা
রোজালিন্ডকে নিয়ে কবিতা। এ নিয়ে সিলিয়া প্রচুর হাসি-ঠাট্টা করেছে রোজালিন্ডের সাথে। কিন্তু এগুলো যে
কার কীর্তি তা এখনও বুঝে উঠতে পারেনি দুজনে। ওরা ভেবেছে রোজালিন্ডের কোনও প্রেমিক
এসে জুটেছে এই বনে। এবার অরল্যান্ডোকে দেখে তাদের বুঝতে বাকি রইল না কে সেই প্রেমিক।
একদিন
গ্যানিমিডবেশী রোজালিন্ডের আমন্ত্রণ রাখতে অরল্যান্ডো এল তাদের কুটিরে। সিলিয়া আর
টাচস্টোনের সামনেই অরল্যান্ডোকে রোজালিন্ড বলল, “গাছের বাকলে খোদাই করে কবিতা লেখার
জন্য গোটা গাছটারই যে ক্ষতি হচ্ছে তা বোঝার মতো বুদ্ধিও বোধহয় তোমার নেই? আচ্ছা, তাহলে এক কাজ কর। রোজালিন্ডকে
নিয়ে কবিতা লেখার প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকে তা শুনিয়ে দিও। তাহলে আর গাছের বাকলে খোদাই করে কবিতা লেখার
প্রয়োজন হবেনা।”
অরল্যান্ডোর
মনে ধরল গ্যানিমিডের কথাটা। এরপর থেকে প্রায়ই সে আসতে লাগল গ্যানিমিডের কাছে। রোজালিন্ডকে নিয়ে কবিতা
লেখার প্রেরণা এলেই সে গ্যানিমিডকে ডেকে তা শুনিয়ে দিত। অরল্যান্ডোর লেখা কবিতা
শুনে গ্যানিমিডবেশী রোজালিন্ড বুঝতে পারল অরল্যান্ডো সত্যি ভালোবাসে তাকে।
ডিউকের সাথে
খাওয়া-দাওয়া সেরে একদিন অরল্যান্ডো যখন গ্যানিমিডের কাছে যাচ্ছে, সে সময় বনের মাঝে এক ভয়ানক দৃশ্য দেখে থমকে দাড়াল অরল্যান্ডো
- যেখানে সে দাঁড়িয়ে আছে তার থেকে কিছুটা দূরে এক বিরাট গাছের গুঁড়িতে হেলান
দিয়ে ঘুমোচ্ছে একটা লোক। আর একটা বিষধর সাপ ফণা তুলে গাছের ডাল বেয়ে নীচে
নেমে আসছে। অরল্যান্ডোর কোমরে তলোয়ার আছে কিন্তু তাতে হাত দেবার আগেই সাপটা দেখতে
পেল তাকে। ভয় পেয়ে সাপটা তখনই তার ফণা নামিয়ে ঘুমন্ত লোকটির পাশ কাটিয়ে ঢুকে
পড়ল একটা গর্তের মাঝে। গর্তের পাশেই ছিল একটা বড়ো ঝোপ। অরল্যান্ডো দেখতে পেল সেই
ঝোপের মাঝে শিকারের আশায় ওত পেতে রয়েছে এক বিশাল সিংহী। সে জানে সিংহ ঘুমন্ত মানুষকে
আক্রমণ করে না। তবে লোকটি জেগে উঠতেই তার উপর ঝাপিয়ে পড়বে সিংহীটা। ততক্ষণে অরল্যান্ডো
মন স্থির করে ফেলেছে সে লোকটিকে বাচাবেই। লোকটি কিন্তু নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। সে
জানে না তার পাশে মরন দীড়িয়ে।
ধীরে ধীরে অরল্যান্ডো
এগিয়ে গেল লোকটির দিকে। লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে বেজায় চমকে উঠল সে- লোকটি আর
কেউ নয়, তার বড়ো ভাই অলিভার।
তার সমস্ত
বিষয়-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে অলিভারকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন ডিউক ফ্রেডারিক।
সেই থেকে পাগলের মতো হন্যে হয়ে অরল্যান্ডোকে খুঁজে বেড়াচ্ছে অলিভার। ডিউক তাকে কথা দিয়েছেন অরল্যান্ডোকে ধরিয়ে দিতে
পারলে তিনি তার সব সম্পত্তি ফেরত দিয়ে দেবেন অলিভারকে। সে কথা জানে অরল্যান্ডো। একবার তার মনে হল এখান থেকে চলে যাই।
পরক্ষণেই ভেবে
দেখল এভাবে সিংহীর মুখে ভাইকে ছেড়ে দিয়ে যাওয়া উচিত হবে না তার। সে ঘুমন্ত
অলিভারের কাছে এসে খাপ খুলে তলোয়ার বের করল। ঘুমের ঘোরে একবার নড়া-চড়া করে উঠল
অলিভার। সাথে সাথে প্রচণ্ড
গর্জন করে সিংহী ঝঁপিয়ে পড়ল শিকারের উপর। সিংহীর আওয়াজে জেগে উঠল অলিভার। চোখ
মেলে দেখল যে ভাইয়ের জন্য সে বিষয়-সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে, যাকে ধরতে সে ঢুকেছে এই বনে -তার সেই ছোটো ভাই অরল্যান্ডো
প্রচণ্ডভাবে লড়াই করছে এক সিংহীর সাথে। অরল্যান্ডোর তলোয়ার পুরো ঢুকে গেছে
সিংহীর গলায় আর সিংহীর থাবার আঘাতে ফালা ফালা হয়ে গেছে অরল্যান্ডোর সারা শরীর,
চারিদিক ভেসে যাচ্ছে রক্তে।
অরল্যান্ডো
সিংহীকে মেরে ফেললেও সে নিজে আহত হল প্রচণ্ড ভাবে। রক্তাক্ত ভাইকে বুকে জড়িয়ে
ধরে তাকে নিজের আস্তানায় নিয়ে এল অলিভার। নিজের ছোটো ভাইয়ের প্রতি খারাপ আচরণের জন্য বারবার নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগল
অলিভার।
অ্যাডামের মুখে
অরল্যান্ডোর আহত হবার কথা শুনতে পেয়ে নির্বাসিত ডিউক তার সঙ্গী সাথী সহ দেখতে
এলেন তাকে। ডিউকের নির্দেশমতো অ্যাডাম জঙ্গল থেকে কিছু বুনো লতা- পাতা নিয়ে এসে সেগুলি
বেটে তার রস লাগিয়ে দিল অরল্যান্ডোর ক্ষতস্থানগুলিতে। সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে গেল
রক্ত পড়া।
এবার অরল্যান্ডো
তার বড়ো ভাই অলিভারকে পাঠিয়ে দিলেন গ্যানিমিডের কাছে। তার মুখে প্রিয় অরল্যান্ডোর
আহত হবার খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে গেল গ্যানিমিডবেশী রোজালিন্ড। তার সেবা-শুশ্রূষা
করে জ্ঞান ফিরিয়ে আনল অ্যালিয়েনাবেশী সিলিয়া। এরপর তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে
অরল্যান্ডোর কাছে ফিরে এল অলিভার। দাদার মুখ থেকে বারবার অ্যালিয়েনয় কথা শুনে অরল্যান্ডো
বুঝলেন অ্যালিয়েনাকে ভালো লেগেছে দাদার। পরদিন থেকে নানা ছুতোয় অলিভারকে রোজই গ্যানিমিডের কুটিরে পাঠাতে লাগলেন অরল্যান্ডো
যাতে সিলিয়া আর অলিভার পরস্পরের কাছাকাছি আসার সুযোগ পায়। রোজ রোজ দেখা হওয়ার
ফলে অলিভার আর সিলিয়া, পরস্পর পরস্পরকে
ভালোবেসে ফেলল।
নির্বাসিত ডিউক
প্রায়ই অরল্যান্ডোকে দেখতে আসতেন তার কুটিরে। একদিন গ্যানিমিড-বেশী রোজলিন্ড আর অ্যালিয়েনা-রূপী
সিলিয়া এসেছে অরল্যান্ডোকে দেখতে, এমন
সময় তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে ডিউকও হাজির হলেন সেখানে। পুরুষ-বেশী রোজালিন্ডকে দেখতে পেয়ে পিতৃস্নেহ উথলে
উঠল ডিউকের। বাবাকে দেখে রোজালিন্ডও স্থির থাকতে পারল না। বাবা! বাবা! বলে কাঁদতে কাঁদতে
সবাই অবাক হয়ে দেখল গ্যানিমিড আর কেউ নয়, পুরুষের
ছদ্মবেশে ডিউকের আদরের মেয়ে রোজালিন্ড। কেন রাজকীয় আরাম-আয়েস ছেড়ে এই দুর্গম
বনে আসতে হয়েছে -- তার কিছুটা আগেই অরল্যান্ডো আর অলিভারের মুখে শুনেছিলেন ডিউক।
এবার বাকিটুকু শুনলেন মেয়ে রোজালিন্ডের কাছে।
ডিউক জানতে
পারলেন অরল্যান্ডো-রোজালিন্ড আর সিলিয়া-অলিভারের ভালোবাসার কথা। তিনি বনের মাঝেই
তাদের বিয়ে দিয়ে দিলেন।
এরই মধ্যে এক
আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল। অলিভারের মেজভাই জ্যাক ডি’বয় এসে হাজির হল সেখানে। সে নির্বাসিত ডিউককে বলল, তার সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি তাকে
ফেরত দিয়ে সিংহাসন ত্যাগ করে ফ্রেডারিক নিরুদ্দেশ যাত্রা করেছেন-করুণাময় ঈশ্বরের
খোজে। এই বলে ফ্রেডারিকের লেখা
একটি চিঠি তুলে দিল তার হাতে। চিঠিটা খুলে ডিউক দেখলেন ফ্রেডারিক লিখেছেন তিনি সসৈন্যে
রওনা দিয়েছিলেন তাদের হত্যা করার উদ্দেশ্য নিয়ে। পথিমধ্যে তার দেখা হয়ে যায়
ঈশ্বরভক্ত এক মহাপুরুষের সাথে। তার উপদেশ অনুযায়ী তিনি সংসার, রাজ্যপাট সবকিছু বড়ো ভাইকে ফিরিয়ে দিয়ে ঈশ্বরবন্দনায় তার
বাকি জীবন কাটিয়ে দেবার সংকল্প করেছেন।
সবাই আশ্চর্য
হয়ে গেল অত্যাচারী ফ্রেডারিকের এই অদ্ভুত পরিবর্তনের কথা শুনে। এবার সবাইকে নিয়ে
ডিউক ফিরে এলেন তার হারিয়ে-যাওয়া সাম্রাজ্যে। সাথে এল না শুধু জ্যাকস। শান্তির আশায় সবকিছু
ছেড়ে দিয়ে আর্ডেনের বনে রয়ে গেল সে।
No comments:
Post a Comment