Total Pageviews

Thursday, December 20, 2018

The tragical history of Dr. Faustus by Christopher Marlowe - Bengali Translation - ড. ফস্টাস - ক্রিস্টোফার মার্লো - সম্পূর্ন বাংলা অনুবাদ



the tragical history of d. faustus bengali translation














The tragical history of Dr. Faustus by Christopher Marlowe - Bengali Translation -  ড. ফস্টাস - ক্রিস্টোফার মার্লো - সম্পূর্ন বাংলা অনুবাদ 

ডক্টর ফস্টাস
চরিত্রসমূহঃ
পোপ মহোদয়, কার্ডিনাল অভ লোরেইন, জার্মানীর সম্রাট, ডিউক অভ ভ্যানহোল্ট, ডক্টর জন ফস্টাস, ভ্যালডেস - ফস্টাসের বন্ধু, কর্নেলিয়াস - ফস্টাসের বন্ধু, ওয়াগনার - ফস্টাসের ভৃত্য, ভাড়, রবিন, র‍্যালফ, মদ বিক্রেতা, অশ্ব ব্যবসায়ী, জনৈক নাইট, একজন বৃদ্ধ, ডাচেস অভ ভ্যানহোল্ট, লুসিফার, বিলজীবাব, মেফিস্টোফিলিস, সু-দূত, কু-দূত, শয়তানের দল, কয়েকজন পণ্ডিত, জনাকয় খ্রীষ্টান ভিক্ষু, সপ্ত রিপুর রূপধারী প্রেতবৃন্দ, কয়েকজন পরিচারক, আলেকজাণ্ডার দি গ্রেট এবং হেলেন অভ ট্রয়ের প্রেতাত্মা এবং কোরাস
অন্যান্য লিঙ্ক সমূহঃ ১। ইংরেজিতে মূল টেক্সট   ২। পরের অঙ্কের অনুবাদ    
৩। ড. ফস্টাসের সমস্ত টিকাসমূহ বাংলায়।    ৪। ক্রিস্টোফার মার্লোর জীবন  
৫। সম্মান ৩য় বর্ষের অন্যান্য লেখা ও অনুবাদ সমূহ

ডক্টর ফস্টাস
কোরাসের প্রবেশ
কোরাসঃ সুধিবৃন্দ, থ্র্যাসিমিনির যুদ্ধক্ষেত্রে, রণদেবতা মার্স যুদ্ধবাজ কার্থেজীনিয়ানদের পক্ষ নিয়েছিলেন। সেই ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার অভিপ্রায় আমাদের কবির নেই। রাজন্যবর্গ প্রাসাদমালায় প্রেম নিয়ে যে ছেলেখেলা করেন তা রাষ্ট্রের পতনের কারণ হয়ে দাড়ায়। কবি এ ব্যাপারেও আগ্রহী নন। গৌরবজনক ও বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রশস্তি গাইবার উদ্দেশ্যেও কবি তার চমৎকার কাব্যসুধা ব্যবহার করতে চান না। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ফস্টাসের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের কাহিনী মঞ্চায়ন করা। ধৈর্য্য সহকারে সবদিক বিচার করে আপনারা যেন আমাদের প্রয়াসের প্রশংসা করেন এ আবেদন রাখছি। ফস্টাসের শৈশবের কথাই আমরা প্রথমে বলব। জার্মানীর ছোট্ট শহর রোডসে তার জন্ম হয়। তার পিতা-মাতা উচ্চবংশীয় ছিলেন না। যৌবনে পদার্পণ করার পর তিনি উইটেনবার্গ চলে যান। তথাকার আত্মীয় স্বজনরাই মূলতঃ তার দেখা শোনা করেন। অতি শীঘ্র তিনি ধর্মশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং বিদ্যাবত্তার সুফলা ক্ষেত্রটির শোভাবৃদ্ধি করেন। ধর্মশাস্ত্র ও ঈশ্বর সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে তর্কবিতর্ক করে যারা আনন্দ পেতেন, উৎকর্ষতায় তাদের সবাইকে তিনি ছাড়িয়ে যান কিন্তু জ্ঞানের গর্ব ও অহংবোধে তিনি ফেটে পড়তে থাকেন। ফলে মোমের পাখায় ভর করে তিনি সাধারণ মানুষের অধিকারের সীমা অতিক্রম করেন এবং দেবতাদের অভিসন্ধিতে পাখা গলে গিয়ে ইকারুসের মত তার পতন ঘটে ফস্টাস শয়তানোচিত ক্রিয়াকলাপে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষার স্বর্ণালী উপহারে অতিরিক্ত তৃপ্ত হয়ে তিনি প্রেততত্ত্বে মনোনিবেশ করেন। যাদুবিদ্যা তার সর্বাপেক্ষা প্রিয় বিষয় হয়ে দাড়ায়। স্বর্গসুখের চেয়েও ইন্দ্রজাল চর্চাকেই তিনি শ্রেয় মনে করেন। ঐ দেখুন, ফস্টাস নামধারী সেই লোকটি নিজ পাঠকক্ষে বসে আছেন
[প্রস্থান]

ডক্টর ফস্টাস
প্রথম অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
ফস্টাসের পড়ারকক্ষ
ফস্টাসঃ ওহে ফস্টাস, অধ্যয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নাও। যে বিষয়ে অধ্যাপনা করতে চাও সেটা সম্বন্ধে গভীর অধ্যয়ন শুরু কর। তুমি তো ডক্টর অভ ডিভানিটি ডিগ্রী অর্জন করেছ। তোমার বেশভূষা ধর্মবেত্তাদের মতোই হোক। কিন্তু তোমার লক্ষ্য হোক সকল শিল্পকলার শেষ সীমায় পৌছে যাওয়া এবং আমৃত্যু আরিস্টটলের রচনাপড়ে দিন কাটানো। সুমধুর অ্যানালিটিক্স তুমি আমাকে বিমুগ্ধ করেছ। বেনে ডিসারের এস্ট ফিনিস লজিসিস-তবে কি সুদক্ষভাবে তর্ক করাই যুক্তিবিদ্যার প্রধান লক্ষ্য। অধিকতর অলৌকিক কিছু উপহার দেবার সাধ্য কি এ শাস্ত্রের নেই? ফস্টাস, ঐ লক্ষ্য তুমি অর্জন করে ফেলেছ। অতএব ওসব পড়া বাদ দাও। এর চেয়ে মহত্তর কোন বিষয় অধ্যয়নই হবে তোমার প্রজ্ঞার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। অস্তিত্ব ও অস্তিত্বহীনতা সংক্রান্ত শাস্ত্র, তুমি বিদেয় হও। যেখানে দার্শনিক ব্যর্থ হন, সেখানে থেকেই চিকিৎসক কাজ শুরু করেন । অতএব গ্যালেন, আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। ফস্টাস, তুমি বরং চিকিৎসক হও, বিস্তর টাকাকড়ি কামাও আর কোন রোগের চমকপ্রদ ওষুধ উদ্ভাবন করে চিরস্থায়ী খ্যাতি অর্জন কর। সামাম বোনাম মেডিসিনে স্যানিটাস অর্থাৎ দৈহিক সুস্থতা নিশ্চিত করাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের লক্ষ্য। কিন্তু ফস্টাস, তুমি কি এই লক্ষ্যে পৌছাওনি? তোমার সাধারণ কথাবার্তায়ও তো রোগ নিরাময়ের সূত্র থাকে। তোমার দেওয়া ব্যবস্থাপত্র গুলো স্থায়ী মূল্যবান বস্তু বলে বিবেচনা করা হয়। সেগুলো দ্বারা তামাম শহরবাসী প্লেগের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে; দূর হয়েছে হাজার খানেক জটিল রোগ-বালাই। তবু ফস্টাস, তুমি যা ছিলে তাই রয়েছ। তুমি এক সাধারণ মানুষ। হ্যা, যদি তুমি মানুষকে চিরজীবি করতে পারতে বা মরা মানুষ বাচিয়ে তুলতে পারতে তাহলে এই পেশার মূল্যায়ন হতো। অতএব চিকিৎসাশাস্ত্র, বিদেয় হও। আচ্ছা জাস্টিনিয়ানের গ্রন্থাবলী কোথায়?
(ফস্টাস পড়তে শুরু করেন) যদি উইলের মারফত একটি মাত্র জিনিস দুই ব্যক্তিকে অর্পণ করা হইয়া থাকে, তাহা হইলে একজন দ্রব্যটি পাইবে এবং অপরজন ঐ দ্রব্যের মূল্য গ্রহণ করিবে।-দূর, এতো উত্তরাধিকার সংক্রান্ত তুচ্ছ বিষয় । (তিনি পুনরায় পড়েন) পিতা সন্তানকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না, যদি না ------- এই তো হচ্ছে আইনের সার্বজনীন রূপ এবং এটাই ইনস্টিটিউটের আলোচ্য বিষয়। এ বিদ্যা অর্থলোভী মজুরের জন্যই মানানসই। তাদের লক্ষ্যই হল পার্থিব কিছু লাভ করা। আমার জন্য এ শাস্ত্র বড়ই দাসোচিত এবং সঙ্কীর্ণ প্রকৃতির। সবকিছুই যখন পড়া শেষ তখন ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়নই সবচেয়ে ভাল। এটা সন্ত জেরোমের বাইবেলফস্টাস, ভাল করে এটায় চোখ বুলাও ।
(পঠন) স্টাইপেন্ডিয়াম পিকাটি মোর এস্ট! হাঃ স্টাইপেন্ডিয়াম'পাপের শাস্তি মৃত্যু- এ বড় শক্ত কথা । (পুনরায় পঠন) সি পেকাসি নিগামাস, ফ্যালিমুর, এট নালা এষ্ট ইন নোবিস ভেরিটাস-যদি আমরা বলি, আমাদের কোন পাপ নেই, তা হবে আত্মপ্রবঞ্চনার নামান্তর এবং আমাদের মাঝে কোন সত্য থাকবে না। তাহলে আমরা তো পাপ করবই এবং তার ফলশ্রুতিতে মারা যাব হ্যা, আমরা অবশ্যই মরব। এ মৃত্যু অনন্ত, অচঞ্চল। এ মতবাদকে কি নামে আখ্যায়িত করা হয়? চি সেরা সেরা অর্থাৎ যা ঘটার তা ঘটবেই। কাজেই ধর্মশাস্ত্র, বিদায় তোমায়। যাদুকরী অধিবিদ্যা আর প্রেততত্ত্ব বিষয়ক এই বইগুলো দারুণ উপভোগ্য। রেখা, বৃত্ত, দৃশ্য অক্ষর এবং চিহ্ন সম্বন্ধেই আমি এখন বেশী আগ্রহী। ওহ, একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র ক্ষমতা সম্মান, সর্বময় প্রভাব, প্রাপ্তি এবং বিনোদনের কি সুবিশাল জগত আস্বাদনের প্রতিশ্রুতি পেয়ে যায়! অচঞ্চল মেরুদ্বয়ের মাঝের সব কিছুই থাকবে আমার নিয়ন্ত্রণে। সম্রাট ও রাজাদের কেবল আপন রাজ্যেই মান্য করা হয়। বাতাস সৃষ্টি বা মেঘ বিদীর্ণ করার ক্ষমতা তাদের নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি যাদুবিদ্যায় উৎকর্ষ লাভ করবে তার ক্ষমতার পরিধি মানুষের মন যত দূর যেতে পারে ততখানি পর্যন্তই বিস্তৃত হবে। সুদক্ষ যাদুকর শক্তিমান দেবতার সমতুল্য। অতএব, ফস্টাস মাথা খাটাও, ঐশ্বরিক শক্তি অর্জনের চেষ্টা কর ।
[ওয়াগনারের প্রবেশ]
ওয়াগনার, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জর্মন ভ্যালডেস ও কর্নেলিয়াসকে খবর দাও।
তাদেরকে আমার সাথে দেখা করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাও।
ওয়াগনারঃ যাচ্ছি, হুজুর ।
[প্রস্থান]
ফস্টাসঃ যত দ্রুতই পরিশ্রম করি না কেন তার তুলনায় ওদের সাথে মত বিনিময় করেই বেশী উপকৃত হব।
[সু-দূত এবং কু-দূতের প্রবেশ]
সু-দূতওহে ফস্টাস, ঐ অভিশপ্ত বইটা একপাশে সরিয়ে রাখ। ওদিকে তাকালেই তোমার মনে লোভ জেগে উঠতে পারে এবং ঈশ্বরের রোষ তোমার উপর নেমে আসতে পারে। ঐ বইতে ঈশ্বরের নিন্দা করা হয়েছে । তুমি বরং পবিত্র বাইবেল পড়।
কু-দূতফস্টাস, তুমি এগিয়ে চল। ঐ প্রসিদ্ধ বিদ্যার মাঝে প্রকৃতির সব সম্পদ নিহিত আছে। জোভ যেমন আকাশের অধীশ্বর, তুমিও তেমনি এ ধরার প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের নিয়ন্তা হবে।
[দূতদ্বয়ের প্রস্থান]
ফস্টাসঃ এই কথা ভেবে কি আনন্দই না হচ্ছে! ভূত প্রেতদের দিয়ে আমি কি যা খুশী তাই করাতে পারব? প্রেতাত্মারা কি আমার সব সংশয় নিরসন করবে এবং যে কোন দুঃসাহসিক উদ্যোগ নিতে আমায় সহায়তা করবে? আমার নির্দেশে তারা স্বর্ণ আহরণের জন্য ভারতে উড়ে যাবে, প্রাচ্যদেশীয় মুক্তা সংগ্রহের জন্য সমুদ্র মন্থন করবে আর নতুন আবিষ্কৃত অঞ্চলগুলোর সর্বত্র সুমিষ্ট ফল আর রাজকীয় সুখাদ্যের সন্ধান চালাবে। ওরা আমাকে দুর্জেয় দর্শন তত্ত্ব পড়ে শোনাবে। সব বিদেশী রাজার গোপন কথা জানিয়ে দিবে। আমার আদেশে তারা গোটা জার্মানীকে পিতলের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দিবে; চঞ্চলা রাইনের গতিপথ এমনভাবে বদলে দিবে যেন তা প্রিয় নগরী উইটেনবার্গকে বেস্টন করে প্রবাহিত হতে থাকে। ওদের সাহায্যে পাবলিক স্কুল গুলোয় প্রচুর রেশম সরবরাহ করব। তা দিয়ে ছাত্রদের সুন্দর পোশাকে সাজানো হবে। প্রেতকুলের আনা মুদ্রা দিয়ে আমি সেনাবাহিনী গড়ে তুলব এবং আমাদের ভূখণ্ড থেকে পার্মার যুবরাজকে তাড়িয়ে দিয়ে সব কয়টি প্রদেশের একচ্ছত্র শাসনকর্তা হয়ে বসব। আমার বশংবদ প্রেতদের দিয়ে আমি বিচিত্র সব যুদ্ধাস্ত্র উদ্ভাবন করাব। এই অস্ত্রগুলো অ্যান্টওয়ার্প ব্রীজ১০ ধ্বংসের কাজে ব্যবহৃত আগুনে জাহাজের চেয়েও বিস্ময়কর হবে।
[ভ্যালডেস ও কর্নেলিয়াসের প্রবেশ]
আসুন জার্মান ভ্যালডেস, আসুন কর্নেলিয়াস। আপনাদের বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনার দ্বারা আমায় কৃতার্থ করুন। হে ভ্যালডেস, হে সুপ্রিয় ভ্যালডেস ও কর্নেলিয়াস, জেনে রাখুন শেষ পর্যন্ত আপনাদের কথায় বশীভূত হয়ে আমি ইন্দ্রজাল ও ডাকিনীবিদ্যা চর্চার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবশ্য কেবল আপনাদের কথায়ই নয়, আমার কল্পনাপ্রবণ মনের তাগিদেও তা করেছি। ডাকিনীবিদ্যা ছাড়া অন্য কিছু আমার মাথায় ঠাই পাচ্ছে না। দর্শন দুর্বোধ্য ও জঘন্য বিষয়। আইন ও চিকিৎসা শাস্ত্র সাধারণ বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের উপযোগী বিষয়। এই তিন বিদ্যার মধ্যে ধর্মশাস্ত্রই নিকৃষ্টতম। এটা অরুচিকর, কর্কশ, ঘৃণ্য ও বিশ্রী। ইন্দ্রজাল, ইন্দ্রজালই আমায় বিহব করেছে। তাই সুভদ্র বন্ধুগণ আমার এই প্রচেষ্টায় আপনারা সহায়তা করুন। আমি সংক্ষিপ্ত যুক্তিপূর্ণ কথা বলে জার্মান চার্চের পাদ্রীদের হতবুদ্ধি করে দিয়েছি। উইটেনবার্গের গর্ব হিসাবে পরিগণিত পণ্ডিতরা দলে দলে আমার বক্তব্য শুনতে ভীড় জমাচ্ছে। সুকণ্ঠ মিউজেউস১১ নরকে পৌছলে সেখানের প্রেতাত্মারাও এমন করেই তার দিকে ছুটেছিল । এগ্রিপ্লার১২ অনুগত প্রেতকুলকে দেখে গোটা ইউরোপই তাকে সমীহ করত। আমি সেই এগ্রিপ্পার মতই কুশলী হয়ে উঠব।
ভ্যালডেসঃ ফস্টাস, এই গ্রন্থরাজি, আপনার প্রজ্ঞা এবং আমাদের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটলে পৃথিবীর প্রতিটি জাতিই আমাদের পরম শ্রদ্ধা করবে। মার্কিনী আদিবাসীরা যেমন করে তাদের স্পেনদেশীয় প্রভুদের মানে তেমন করেই সর্বপ্রকার প্রেতাত্মা সবসময় আমাদের তিনজনের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। আমরা চাইলে সিংহের মতই তারা আমাদের পাহারা দিবে। জার্মান ঘোড়সওয়ারদের মতই বর্শা হাতে অথবা ল্যাপল্যাণ্ডের দানবদের১৩ মত করেই ওরা আমাদের পাশে পাশে ছুটবে। কোন কোন সময় ওরা নারী কিংবা কুমারীর বেশে উপস্থিত হবে। প্রেমদেবী আফ্রোদিতির১৪ শুভ্র স্তনের মাধুর্যের চেয়েও অধিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে থাকবে তাদের নিরবয়ব ললাটে। জ্ঞানতাপস ফস্টাস, আপনি দৃঢ়সংকল্প হলে প্রেতকুল ভেনিস থেকে আনবে বড় বড় জাহাজ। তারা আমেরিকা থেকে নিয়ে আসবে সেই স্বর্ণসম্ভার যা প্রতি বছর বৃদ্ধ নৃপতি ফিলিপের ধনাগার সমৃদ্ধ করে।
ফস্টাসঃ ভ্যালডেস, বেঁচে থাকার জন্য আপনি যতটা দৃঢসংকল্প, আমিও এ ব্যাপারে ততটাই বদ্ধপরিকর। অতএব আর কোন ফ্যাকরা তুলবেন না।
কর্নেলিয়াসঃ ন্দ্রজাল দ্বারা এমন সব অলৌকিক ঘটনা ঘটানো যাবে যে আপনি এ ছাড়া অন্য কিছুর চর্চা না করার শপথ নিবেন। জ্যোতিষশাস্ত্রে যার দখল রয়েছে, যে নানাভাষা জানে এবং খনিজপদার্থের দ্রব্যগুণ সম্পর্কে যে ওয়াকিবহাল, ইন্দ্রজাল চর্চার সব যোগ্যতাই তার আছে। কাজেই, সংশয়ের দোলায় না দুলে, যাদুবিদ্যায় যশস্বী হউন। দেখবেন, ডেলফির দেবালয়ে১৫ যা লোক যেত তার চেয়েও বেশী লোক আপনার কাছে আসছে। প্রেতকুল আমায় বলেছে যে তারা সাগর শুকিয়ে ফেলতে পারে এবং ডুবে যাওয়া বিদেশী জাহাজে রক্ষিত গুপ্তধন নিয়ে আসতে পারে। শুধু তাই নয়, মাটির গহীনে আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে সম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন তারা সেগুলোও তুলে আনতে পারে। এখন, ফস্টাস, আপনিই বলুন, আমাদের তিনজনের আর কিসের অভাব।
ফস্টাস না, কর্নেলিয়াস আমাদের কোন অভাব নেই। আহা, এসব ভেবে মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠছে। আসুন, আমাকে এমন কোন যাদু দেখান যাতে আমি কোন নিবিঢ় নিকুঞ্জে গিয়ে প্রেতদের ডাকতে পারি আর ঐ সব আনন্দের পুরোপুরি অংশীদার হতে পারি।
ভালডেসঃ তবে দ্রুত কোন নির্জন নিকুঞ্জে চলে যান। সুপণ্ডিত বেকন১৬ এবং এলবাট্রাসের১৭  বইপত্র সঙ্গে রাখুন। হিব্রু সালটার ও নিউ টেস্টামেন্টও কাছে রাখবেন। অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কথা এই আলোচনা শেষ হবার আগেই জানিয়ে দিব।
কর্নেলিয়াসঃ ভ্যালডেস, প্রথমে ফস্টাসকে যাদুবিদ্যা সম্পর্কিত শব্দগুলো শিখিয়ে দিন। পরবর্তীতে অন্যান্য বিধি বিধান জেনে নিয়ে তিনি নিজেই নিজের দক্ষতা যাচাই করতে পারবেন।
ভালডেসঃ প্রথমে আমি আপনাকে প্রাথমিক ও মূল সূত্রসমূহ শেখাব । তারপর আপনি আমার চেয়েও পারদর্শী হয়ে উঠবেন।
ফস্টাসঃতবে আসুন, একত্রে পানাহার করি। পরে আমরা এ শাস্ত্রের খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করব। আজ শয়ন করার পূর্বেই চেষ্টা করে। দেখব আমি কি করতে পারি। আজ রাতেই আমি প্রেতমন্ত্র উচ্চারণ করব; যদি তাতে আমার মৃত্যু হয়, তবুও।
[প্রস্থান]

ডক্টর ফস্টাস
দ্বিতীয় দৃশ্য
ফস্টাসের গৃহের সম্মুখস্থ স্থান
দুজন পণ্ডিতের প্রবেশ
প্রথম পঞ্জিতঅবাক হয়ে ভাবি, ফস্টাসের হল টা কি? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষ কাপিয়ে সে প্রায়ই বলত, এভাবেই আমি এটা প্রমাণ করছি।
দ্বিতীয় পণ্ডিতঃ ঐ দেখ ফস্টাসের চাকরটা আসছে। কাজেই সে কথা আমরা জানতে পারব
ওয়াগনারের প্রবেশ
প্রথম পণ্ডিতঃ ওহে ছোকরা তোমার মনিব কোথায়?
ওয়াগনারঃ ঈশ্বরই জানেন।
দ্বিতীয় পণ্ডিতঃ কেন, তুমি জান না?
ওয়াগনারঃ হ্যা জানি। কিন্তু সে কথা আবশ্যিকভাবে সত্য নয়।
প্রথম পণ্ডিতঃ ধুর ছোকরা, ভাড়ামি বাদ দাও। বল, উনি কোথায়?
ওয়াগনারঃ আপনারা ডক্টরেট ডিগ্রীর ছাত্র হিসাবে এই প্রসঙ্গ নিয়েই চাপাচাপি করবেন-এ আচরণ যুক্তিসঙ্গত নয়। অতএব, ভুল স্বীকার করে নিন এবং মন দিয়ে আমার কথা শুনুন।
দ্বিতীয় পণ্ডিতঃ কেন, তুমি কি বলনি যে তুমি সে কথা জান?
ওয়াগনারঃ যা বলেছি তার কি কোন সাক্ষী আছে?
প্রথম পঞ্জিতঃ হ্যা, ছোকরা আমি তোমাকে তা বলতে শুনেছি।
ওয়াগনারঃ আমার সাথীকে জিজ্ঞাসা করুন আমি চোর না জোচ্চর ।
দ্বিতীয় পণ্ডিতঃ বেশ, তুমি তাহলে আমাদের প্রশ্নের জবাব দিবে না?
ওয়াগনারঃ হ্যা, ও ভদ্রমহোদয়গণ, আমি জবাব দিব। তবু বলি, নেহায়েৎ গর্দভ না হলে আমায় কখনো এমন একটা প্রশ্ন করতেন না। আমার কর্তা কি স্বাভাবিক দেহধারী ব্যক্তি নন? তিনি কি জড় বস্তু? কাজেই আপনাদের এ প্রশ্ন করা উচিত হয়নি। কিন্তু আমি ঠাণ্ডা স্বভাবের মানুষ। আমার রাগ দ্রুত বাড়ে না এবং আমি স্নেহ প্রবণ। যদি আমি এমন ধরনের লোক না হতাম তবে বধ্যভূমির চল্লিশ ফুটের মাঝে আপনাদের না আসাটাই ভাল হত। অবশ্য আদালতের পরবর্তী অধিবেশনে যে আপনাদের ফাসির দৃশ্য দেখতে পাব এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই। এইভাবে যুক্তিতে আপনাদের হারিয়ে দিয়ে, পিউরিটানের১৮ মতো মুখভঙ্গী করে বলবঃ হে প্রিয় ভ্রাতৃবৃন্দ, সত্য সত্যই আমার মনিব এখন বাসার ভিতরে তার বন্ধু ভ্যালডেস ও কর্নেলিয়াসের সাথে খাওয়া-দাওয়া করছেন। এই মদ যদি কথা বলতে পারত তবে তা এ তথ্যই আপনাদের জানাতো। প্রিয় ভ্রাতৃগণ, হে প্রিয় ভাতৃগণ, ঈশ্বর আপনাদের আশীর্বাদ করুন, রক্ষা করুন ও বাচিয়ে রাখুন।
[প্রস্থান]
প্রথম পঞ্জিতঃ ঐ লোক দুটো তাদের কুহকী বিদ্যার জন্য সারা দুনিয়ায় কুখ্যাত। আমার আশঙ্কা ফস্টাসও সেই অভিশপ্ত বিদ্যার মোহে পড়েছেন।
দ্বিতীয় পণ্ডিতঃ যদি উনি আমার বন্ধু না হয়ে অপরিচিত লোকও হতেন তবু উনার জন্য দুঃখবোধ করতাম। চলুন, এখন বরং রেক্টর মহোদয়কে ব্যাপারটা জানাই। দেখি উনি সুপরামর্শ দিয়ে ফস্টাসকে সঠিক পথে ফেরাতে পারেন কি না।
প্রথম পণ্ডিতঃ হায়, আমার ভয় হচ্ছে, কোন কিছুই তাঁকে সুপথে আনতে পারবে না।
দ্বিতীয় পণ্ডিতঃ তবু চলুন যথাসাধ্য চেষ্টা করি।
 [প্রস্থান]
ডক্টর ফস্টাস
তৃতীয় দৃশ্য
এক কুঞ্জবন
ফস্টাসের প্রবেশ
ফস্টাসঃ এখন পৃথিবীর বিষন্ন ছায়া অরিয়নের১৯ উজ্জ্বল বৃষ্টিভেজা অবয়ব দেখার জন্য আকুল। এই তারকাপুঞ্জ দক্ষিণ মেরু থেকে আকাশপানে উঠে আসে আর কৃষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলে আকাশকে তমসাচ্ছন্ন করে ফেলে।
ফস্টাস, মন্ত্রপাঠ আরম্ভ কর। শয়তানের উদ্দেশ্যে আত্মনিবেদন ও প্রার্থনা কর। সেই দৃশ্য দেখে প্রেতাত্মারা তোমার আদেশ মান্য করে কি না তা পরখ কর । এই বৃত্তের মাঝে জিহোভার২০ নাম রয়েছে। রয়েছে অক্ষরসমূহ আগে পিছে বিন্যস্ত করে তৈরী করা শব্দ। সেই সাথে আছে পুণ্যাত্মা সন্তদের সংক্ষিপ্ত নাম, সকল নক্ষত্র ও জ্যোতিষ্কের চিত্র এবং চলমান গ্রহসমূহ ও রাশিচক্রের ছবি। এই সব বস্তুর দ্বারা প্রেতকুলকে জেগে উঠতে বাধ্য করা হয়। অতএব ফস্টাস ভয় পেওনা । মনটাকে স্থির কর। ইন্দ্র জালের সাহায্যে সর্বোচ্চ কি করা সম্ভব তা যাচাই কর। [বজ্রপাত]
হে একিরনের২১ দেবতা আমার প্রতি সুপ্রসন্ন হও। জিহোভার ত্রিমুখী দেবত্বকে বিদায় জানাচ্ছি। অগ্নি, বায়ু, জল ও মৃত্তিকার প্রেতদের স্বাগত জানাই। পূর্বাঞ্চলের রাজপুত্র, ও জ্বলন্ত, নরকের অধীশ্বর বিলজীবাব এবং ডেমোগর্গ২২ আমরা আপনাদের অর্ঘ নিবেদন করছি। অনুগ্রহ করুন যেন এই দণ্ডে মেফিস্টোফিলিসের উত্থান হয়। কেন বিলম্ব করছেন? জিহোভার কৃপায়, আমার ছিটানো পবিত্র পানির ও আমার করা ক্রসচিহ্নের প্রভাবে মেফিস্টোফিলিস যেন এখন আমাদের অনুগত ব্যক্তি হিসারে উপস্থিত হয়।
[মেফিস্টোফিলিসের প্রবেশ]
তুমি বড় কুৎসিত। আমার সহচর হবার যোগ্য তুমি নও। নির্দেশ দিচ্ছি, তুমি ফিরে যাও এবং চেহারা বদলাও। বুড়ো ফ্রান্সিস্কান২৩ ভিক্ষুর বেশ ধারণ করে প্রত্যাবর্তন কর। ঐ পবিত্র বেশভূষা একজন শয়তানের জন্যই সবচেয়ে মানানসই। [মেফিস্টোফিলিসের প্রস্থান]
আরে, আমার উচ্চারিত মন্ত্রের গুণ আছে দেখছি। কুহকী বিদ্যায় পারদর্শী হতে কে না চায়? এই মেফিস্টোফিলিস কতই না সুন্দর! সে বড়ই অনুগত ও সুবিনীত দাস। হ্যা, যাদুর এমনি শক্তি আর আমার মন্ত্রের এমনি টান। ফস্টাস, তুমিই এখন যাদু সম্রাট। পরাক্রমশালী মেফিস্টোফিলিসকে তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পার। ভ্রাতৃপ্রতিম মেফিস্টোফিলিসের প্রতিমূর্তির শক্তিতে তুমি বলীয়ান
[ফ্রান্সিস্কান সাধুর বেশে মেফিস্টোফিলিসের পুনঃপ্রবেশ]
মেফিঃ এখন বল তুমি আমাকে দিয়ে কি করাতে চাও?
ফস্টাসঃ যতদিন জীবিত আছি তুমি আমার আজ্ঞাবহ থাকবে। আমি যা করার আদেশ দেই তুমি তাই করবে। হোক না সে আদেশ চাঁদকে কক্ষচুত করার বা মহাসাগরের জলে ধরণী প্লাবিত করার।
মেফিঃ আমি মহামতি লুসিফারের গোলাম। তার অনুমতি ছাড়া তোমায় মান্য করা হয়তো সম্ভব হবে না। তিনি যা আদেশ দেন তার অধিক কিছু আমরা করতে পারি না।
ফস্টাসঃ কেন, সে কি তোমাকে আমার সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়নি।
মেফিঃ না, আমি স্বেচ্ছায়ই এখানে এসেছি ।
ফস্টাসঃ আমার মন্ত্রোচ্চারণ কি তোমায় জাগিয়ে দেয়নি? জবাব দাও।
মেফিঃ সেটা অন্যতম কারণ। তবে ঘটনাচক্রেই এখানে আমার আগমন। যখনই আমরা শুনি যে কেউ ঈশ্বরের নাম বিকৃত করছে, ধর্মগ্রন্থ এবং সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করছে তখনই আমরা তার গৌরবময় আত্মাটি পাবার আশায় উড়ে যাই। কেউ অভিশাপ পাবার মত কাজ না করলে আমার তার কাছে আসব না। সুতরাং প্রেতদের সান্নিধ্য লাভের সংক্ষিপ্ততম পথ হল ঈশ্বরকে[ট্রিনিটি]২৪ দৃঢ়চিত্তে প্রত্যাখ্যান করা এবং অন্তর দিয়ে নরকের অধীশ্বরকে ডাকা ।
ফস্টাসঃ ও কাজটা ফস্টাস ইতোমধ্যেই করেছে। সে বিশ্বাস করে বিলজীবাব ব্যতীত আর কোন অধিপতি নেই যার কাছে সে নিজেকে সমর্পণ করতে পারে। অভিসম্পাত নামক শব্দটা তাকে ভীত করে না কারণ সে ইলিসিয়াম২৫ নরকের মাঝে কোন তফাৎ খুঁজে পায়না। প্রাচীন দার্শনিকদের সাথেই তার আত্মা একাত্মবোধ করে। কিন্তু মানবাত্মা বিষয়ক অন্তঃসারশূন্য প্যাচাল এখন বাদ দেওয়া যাক। তুমি বরং তোমার প্রভু লুসিফারের পরিচয় ব্যক্ত কর ।
মেফিঃ তিনি সকল প্রেতাত্মার নেতা ও প্রধান প্রশাসক।
ফস্টাসঃ একদা এই লুসিফারই কি দেবদূত ছিল?
মেফিঃ হ্যা, ফস্টাস। ঈশ্বর তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন।
ফস্টাসঃ তাহলে কিভাবে সে শয়তানের রাজা হল?
মেফিঃ তার উচ্চাকাখা, অহঙ্কার ও ঔদ্ধত্যের জন্যই ঈশ্বর তাকে স্বর্গধাম থেকে বিতাড়িত করেছেন।২৬
ফস্টাসঃ তোমরা কারা যারা লুসিফারের সাথে বসবাস করছ?
মেফিঃ আমরা অসুখী আত্মা। লুসিফারের সাথে হাত মিলিয়ে আমরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলাম তাই তার সাথেই আমাদের পতন ঘটেছে এবং একই সাথে আমরা চির অভিশপ্ত হয়েছি।
ফস্টাসঃ অভিশপ্ত জীবন তোমরা কাটাচ্ছ কোথায়?
মেফিঃ নরকে ।
ফস্টাসঃ তাহলে তুমি নরকের বাইরে অবস্থান করছ কিভাবে?
মেফিঃ কেন, এটাই তো নরক এবং আমি এর বাইরে অবস্থান করছি না। যে আমি একদা ঈশ্বরের মুখ দর্শন করতাম আর স্বর্গের চিরস্থায়ী সুখ ভোগ করতাম সেই আমি অনন্ত স্বর্গসুখ থেকে বঞ্চিত হয়ে কি দশসহস্রগুণ নরক যন্ত্রণা ভোগ করছি না? তুমি কি তা অনুধাবন কর না? ওহে ফস্টাস, এসব তুচ্ছ প্রশ্ন বাদ দাও। এ জাতীয় কথা আমার বিপন্ন মনে ভয়ের সঞ্চার করে।
ফস্টাসসে কি! স্বর্গসুখ থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষমতাবান মেফিস্টোফিলিস এত আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছে কেন? ফস্টাসের কাছ থেকে বীরোচিত ধৈর্য্য ও পৌরুষের পাঠ নাও । যে আনন্দ আর কোনদিন উপভোগ করবে না তাকে ঘৃণা করতে শিখো। যাও, মহান লুসিফারকে এ খবর দাও যে ফস্টাস ঈশ্বরের ও তার অনুচরদের সম্বন্ধে বেপরোয়া ধ্যান ধারণা পোষণ করে নিজের কাঁধে অনন্ত মৃত্যুকে টেনে আনতে চায়। আরো বলবে যে, ফস্টাস তার কাছে আপন আত্মা সমর্পণ করছে। বিনিময়ে সে যেন তাকে চব্বিশটা বছর সুখের জোয়ারে ভাসতে দেয় ।
লুসিফারের অনুমতিক্রমে তুমি সর্বক্ষণ আমার সেবায় নিয়োজিত থাকবে আমি যা প্রশ্ন করি তার উত্তর দিবে, যা জানতে চাইব জানাবে। তুমি আমার ত্রুদের নিধন করবে ও বন্ধুদের সহায়তা করবে তুমি সর্বদাই অনুগতভাবে আমার ইচ্ছানুযায়ী চলবে। যাও, এখন শক্তিমান লুসিফারের কাছে ফিরে যাও। মধ্যরাতে আমার পাঠকক্ষে এসে দেখা করবে এবং তোমার প্রভুর মনের কথা আমায় জানাবে।
মেফিঃ ফস্টাস, আমি সেটাই করব।
ফস্টাসঃ আকাশে যত তারা আছে তার সমসংখক আত্মা যদি আমার দেহে থাকত তবে মেফিস্টোফিলিসকে পাবার জন্য আমি সে সব সম্প্রদান করতাম। ওর সহায়তায় আমি বিশ্বসম্রাট হব। দলবল নিয়ে মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য চলমান বায়ুস্তরের মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণ করাব। আফ্রিকার বেলাভূমিতে বেস্টন করে থাকা পাহাড়গুলোকে সংযুক্ত করব এবং ঐ ভূখণ্ডকে স্পেনের সাথে মিলিয়ে দেব। ফলে উভয় অঞ্চলই আমার করদ রাজ্যে পরিণত হবে। আমাকে অমান্য করে স্পেনীয় বা জার্মান সম্রাট জীবন ধারণ করতে পারবে না। যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গিয়েছি। কাজেই মেফিস্টোফিলিস ফিরে না আসা পর্যন্ত ইন্দ্র জাল নিয়েই ভাবনা চিন্তা করব। [প্রস্থান]

ডক্টর ফস্টাস
চতুর্থ দৃশ্য
একটি রাজপথ
ওয়াগনার এবং জনৈক ভাড়ের প্রবেশ
ওয়াগনারঃ এই ছোকরা, এদিকে আয় তো।
ভাঁড়ঃ আমি ছোকরা?, বল কি? ঈশ্বরের দোহাই, আমি কি নাবালক? মনে হচ্ছে, তুমি আমার মত খোচা খোচা দাড়িওয়ালা অনেক ছোকরা দেখেছ?
ওয়াগনারঃ এই বেটা, বতো তোর রুজি-রোজগারের কোন বন্দোবস্ত আছে কি?
ভাড়ঃ তা তো আছেই আবার আয় বেরিয়ে যাওয়ার পথও আছে। তুমি বরং অন্য কারো সাথে দেখা কর ।
ওয়াগনারঃ হায়রে, দরিদ্র ক্রীতদাস। আপনারা দেখুন, ওর মত ছোড়া পোশাক পরা নগ্নপ্রায় গরীব লোকও কেমন রসিকতা করে। পাজীটার গা খালি। ও বেকার। আমি জানি ও এত ক্ষুধার্ত যে এক টুকরো ভেড়ার মাংসের জন্য হোক না তা কাঁচা, শয়তানের কাছে আত্মাটা বেচে দিতে পারে।
ভাঁড়ঃ কি বললে! এক খণ্ড ভেড়ার মাংসের জন্য শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রি করব, তাও আবার কাচা মাংসের জন্য। মা মেরীর দিব্যি, এত চড়া মূল্য পরিশোধ করতে হলে আমি চাইব মাংসটা রোস্ট করা হোক আর তার সাথে থাকুক মুখরোচক চাটনি।
ওয়াগনারঃ ভাল কথা, শোন, তুই আমার কাজ করবি নাকি? তাহলে আমি তোর সাথে এমন আচরণ করব যেন তুই আমার শিষ্য।
ভাড়ঃ তুমি কি ছন্দে ছন্দে কথা বলেই তেমনটি করবে?
ওয়াগনারঃ নারে ছোকরা। তোকে হালকা সিল্কের কাপড় দিব আর দিব উকুন মারার ওষুধ। নে, এই গিল্ডার (মুদ্রা) গুলো ধর।
ভাড়ঃ কি বললে, গ্রিডিরন? সেগুলো আবার কি?
ওয়াগনারঃ ফরাসী মুদ্রা।
ভঁড়ঃ কিন্তু পবিত্র মাস উৎসবের নামে বলছি যে ফরাসী মুদ্রা নামেই যা, ইংরেজী মুদ্রায়ও তো কাজ ভালই হয়। আর এগুলো দিয়ে আমি করবই বা কি?
ওয়াগনারঃ দেখ ব্যাটা, তোকে এখন থেকে এক ঘন্টা সময় দিচ্ছি। এরপর তুই যেখানেই থাকিস না কেন যে কোন সময় শয়তান তোকে খুঁজে আনবে।
ভাড়ঃ না, না, তোমার এই গ্রিডিরন গুলো ফিরিয়ে নাও ।
ওয়াগনারঃ সত্যি বলছি, আমি ওগুলো ফিরিয়ে নিব না।
ভাঁড়ঃ তা সত্য! কিন্তু ওগুলো তোমার ফেরত নিতেই হবে ।
ওয়াগনারঃ আমি যে মুদ্রাগুলো ওকে দিলাম আপনারাই তার সাক্ষ্য দিবেন।
ভাড় সবাই সাক্ষী, আমি এগুলো তোমায় ফিরিয়ে দিলাম।
ওয়াগনারঃ ঠিক আছে, এখনি আমার আদেশে দুই শয়তান তোকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। বেলিওল ও বেলচার-তোমরা এখানে এসো।
ভাড়ঃ তোমার বেলিওল আর বেলচার এখানে আসুক। তারপর ওদের মারব ধাক্কা। জীবনেও এমন ধাক্কা ওরা খায়নি। ধরা যাক, ওদের একজনকে আমি মেরেই ফেললাম, লোকজন তখন কি বলবে? ওরা বলবে, ঢোলা পান পড়া ঐ লখুঁটাকে দেখছেন কি? ঐ ব্যক্তিই শয়তানটাকে মেরেছে। কাজেই গোটা জেলার লোক আমায় শয়তান খতমকারী নামে ডাকবে।
[দুই শয়তানের প্রবেশ। ভাড় তাদের দেখে চেঁচাতে চেঁচাতে এদিক সেদিক ছুটতে থাকল]
ওয়াগনারঃ বেলিওল আর বেলচার-তোমরা চলে যাও। [শয়তানদের প্রস্থান]
ভাঁড়ঃ যাক বাবা, ওরা গেছে তো? অভিশাপ পড়ুক ওদের উপর। হচ্ছাড়া গুলোর নখ কি লম্বা আর নোংরা। শয়তান দুটোর একটা মর্দ আর একটা মাদী। কিভাবে ওদের চিনবেন তা বলছি? সব মর্দা শয়তানের শিং আছে আর প্রত্যেকটা মাদী শয়তানের পা মাঝ বরাবর চেরা।
ওয়াগনারঃ বেশ, শ্রীমান, তুই আমাকে অনুসরণ কর ।
ভাঁড়ঃ কিন্তু তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? আমি তোমার কথা শুনলে, তুমি কি আমায় বেলিওল ও বেলচারকে ডাকার কৌশল শিখিয়ে দিবে?
ওয়াগনারঃ তোকে এমন কায়দা শিখিয়ে দেব যে তুই নিজেকে কুকুর, বিড়াল, নেংটি ইদুর, ধেড়ে ইদুর বা অন্য যে কোন কিছুতে পরিণত করতে পারবি।
ভাঁড়ঃ এ তুমি কি বলছ? একজন খ্রীষ্টান নিজেকে কুকুর, বিড়াল বা ইদুরে পরিণত করবে! না, না জনাব, যদি তুমি আমায় অন্য কিছু বানাতে চাও, তবে আমাকে একটা ছোট সুন্দর পোকায় পরিণত কর। তাহলে আমি উড়ে উড়ে এখানে, ওখানে এবং সবখানে যেতে পারব। আমি রূপসী মেয়েদের সাথে মজা করব। সত্যি বলছি আমি ওদের মাঝেই থাকব।
ওয়াগনারঃ এই যে শ্রীমান, এসো
ভাঁড়ঃ কিন্তু ওয়াগনার, তুমি কি আমার কথা শুনছ?
ওয়াগনারঃ কি বললি? এই বেলিওল আর বেলচার, এসো তো।
ভাঁড়ঃ হায়, ঈশ্বর! স্যার, দোহাই আপনার, বেলিওল আর বেলচারকে ঘুমিয়ে পড়তে বলুন।
ওয়াগনারঃ বদমাশ, আমাকে প্রভূ ওয়াগনার বলে ডাকবি। তোর বা চোখটা সবসময় আমার ডান পার গোড়ালির দিকে রাখ এবং আমার পদাঙ্ক অনুসরণ কর।
[প্রস্থান]
ভাড়ঃ হে ঈশ্বর, ক্ষমা কর আমায়। ঐ লোক তো ডাচ ভাষায় ফাকা বুলি আওড়াচ্ছে । ঠিক আছে, আমি ওর কথাই শুনব, আর ফাই ফরমায়েশ খাটব । এটাই পরিষ্কার কথা। [প্রস্থান]
বাকি ৪ টি অঙ্ক পড়তে উপরে দেয়া লিঙ্কে যান। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। কপি নয় বেশী বেশী লিঙ্ক শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। 
এখানে ক্লিক করে পরের অঙ্কের অনুবাদ দেখুন 

1 comment: